গুপ্ত যুগের ধর্মীয় জীবন কেমন ছিল

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব গুপ্ত যুগের ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়ের প্রশ্ন "গুপ্ত যুগের ধর্মীয় জীবন কেমন ছিল"। 

গুপ্ত যুগের ধর্মীয় জীবন কেমন ছিল -

শ্রীগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়কালকে ভারতের ইতিহাসের 'সুবর্ণ যুগ' বলা হয়। গুপ্ত যুগে বিজ্ঞান, সাহিত্য, জ্যোতির্বিদ্যা প্রভৃতির বিকাশ ঘটে। ধর্মের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধর্মের বিকাশ এই সময় লক্ষ্য করা যায়। ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্মের প্রভাব বেশি থাকলেও মানুষ বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম, বৈষ্ণব ধর্ম, শৈব ধর্ম, শাক্ত ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। গুপ্ত যুগের মানুষ নিজের ইচ্ছানুসারে ধর্ম পালন করত। নিম্নে গুপ্ত যুগের ধর্মীয় জীবন কেমন ছিল তা তুলে ধরা হল -

ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্ম ঃ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্মের আগমনের ফলে হিন্দুধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের টান কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু গুপ্ত যুগে মানুষ পুনরায় হিন্দুধর্মের প্রতি আস্থাশীল শুরু করে। অর্থাৎ বলা যায়, গুপ্ত যুগে হিন্দুধর্মের পুনর্জাগরন ঘটে। গুপ্ত রাজারা ব্রাহ্মণ্যধর্মের অনুরাগী ছিলেন এবং এই সময় ব্রাহ্মণ্যধর্ম হিন্দুধর্মে পরিণত হয়েছিল। বৈদিক যুগে মানুষ প্রকৃতির পূজা করত, এই সময় বরুণ, ইন্দ্র ছিলেন প্রধান দেবতা। তবে গুপ্তযুগে বৈদিক দেবদেবীর পরিবর্তন ঘটে এবং বিষ্ণু, শিব, দুর্গা, লক্ষ্মী প্রভৃতি দেবদেবী প্রধান হয়ে ওঠে। শিব দুর্গার মত দেবদেবীরা গুপ্ত যুগে বেশি পরিমাণে পুজিত হতে থাকে। গুপ্ত যুগে বৈদিক হিন্দুধর্মের কিছু নিয়ম-রীতি চালু থাকলেও বৈদিক দেবতা ইন্দ্র, বরুণ প্রভৃতির পূজা লোপ পায়।

বৈষ্ণব ধর্ম  ঃ হিন্দু পুরাণের মাধ্যমে ভগবান বিষ্ণুর মহিমা উত্তর ভারতে বেশি পরিমাণ ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে বৈষ্ণব ধর্মের প্রচলন বৃদ্ধি পায়। বৈষ্ণব ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় গুপ্ত রাজাদের গুরুত্ব ছিল। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল, বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করে গুপ্ত সম্রাট প্রথম কুমারগুপ্ত ‘পরম ভাগবত’ উপাধি নিয়েছিলেন। বৈষ্ণব ধর্মের প্রসারে গুপ্ত যুগে বিভিন্ন জায়গায় বিষ্ণুর মূর্তি ও বিষ্ণুমন্দির নির্মিত হয়েছিল।

শৈবধর্ম  ঃ বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ও সেযুগে লেখা বিভিন্ন সাহিত্য থেকে জানা যায় যে, গুপ্ত যুগে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্ম, বৈষ্ণব ধর্মের পাশাপাশি শৈবধর্মের-ও বিকাশ ঘটেছিল। 'কুমারসম্ভবম্' -এ শিবের মহিমা প্রচার করা হয়েছে। স্কন্দগুপ্তের শাসনকালে প্রচলিত মুদ্রা থেকে শৈবধর্মের প্রমাণ মেলে। এযুগে শক্তিপূজা হিসাবে লক্ষ্মী, কালী, দুর্গা প্রভৃতি দেবীর উপাসনা করা হত। 'কুমারসম্ভবম্' -এ মাতৃ দেবতার উল্লেখ রয়েছে, 'অমরকোষ' গ্রন্থেও দেবীপুজার উল্লেখ পাওয়া যায়। গুপ্তযুগে শিব, লক্ষ্মী, কালি, দুর্গার পাশাপাশি কার্ত্তিক ও গণেশ পুজার প্রচলন ঘটেছিল।

বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্ম ঃ গুপ্ত যুগে ব্রাহ্মণ্য হিন্দুধর্মের বিকাশ বেশি ঘটলেও বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মেরও বিকাশ ঘটতে দেখা যায়। সমুদ্রগুপ্ত সিংহলের রাজাকে বৌদ্ধগয়ায় একটি বৌদ্ধ মঠ নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন। চিনা পর্যটক ফা-হিয়েনের রচনা থেকে গুপ্তযুগে বৌদ্ধধর্ম প্রসারের কথা জানা যায়। তবে বৌদ্ধধর্মের প্রচলন থাকলেও তা ছিল দুর্বল প্রকৃতির।

গুপ্তযুগে বৌদ্ধধর্মের পাশাপাশি উত্তর ভারতের মথুরা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে জৈন ধর্মের বিস্তার ঘটেছিল। তবে হিন্দুধর্ম, বৈষ্ণব ধর্ম, শৈবধর্মের প্রচলন বেশি থাকায় বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম-সহ শাক্ত ধর্ম তেমন ভাবে বিস্তার লাভ করতে পারেনি। ফলে গুপ্ত যুগের পর থেকেই এই ধর্মগুলি ক্রমশ ভারতবর্ষে দুর্বল হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন -


Post a Comment

Previous Post Next Post