মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি কি কি ছিল

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব মৌর্য সাম্রাজ্যের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন "মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি কি কি ছিল"। প্রশ্নটি পরীক্ষায় আসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ -

খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে ভারতে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় এবং এই সাম্রাজ্যই হল ভারতের প্রথম একক রাজনৈতিক শক্তি। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ছিলেন এই সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর পর মৌর্য বংশের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং শ্রেষ্ঠ সম্রাট অশোকের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বেশি বিস্তার ঘটেছিল। মৌর্য সম্রাট অশোকের সময়ই গৌতম বুদ্ধ প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্ম বিশ্বধর্মে পরিণত হয়। তবে কালের নিয়মে সৃষ্টি হওয়া জিনিস একদিন পতনের পথে যাবেই। ঠিক সেরকমই হল ১৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। মৌর্য বংশের শেষ সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করে সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মগধে শুঙ্গ বংশের প্রতিষ্ঠা করেন, ফলে মৌর্য বংশের অবসান ঘটে। নিন্মে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি কি ছিল তা আলোচনা করা হল -

সম্রাট অশোকের অহিংস নীতি ঃ ২৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সংঘটিত কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতায় ব্যথিত হয়ে সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি হিংসা কি ? সেটাই ভুলেই গিয়েছিলেন। তাই তিনি আর কোন প্রকার যুদ্ধ বা রাজ্যজয়ের কথা ভাবেননি। এরপর তিনি সর্বক্ষেত্রে অহিংস নীতি গ্রহণ করতে থাকেন, যার সুযোগ বহিরাগতরা তুলেছিলেন।

সম্রাট অশোকের সামরিক দুর্বলতা ঃ সম্রাট অশোকের অহিংস নীতির ফলে ,মৌর্য সামরিক শক্তি যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, অশোকের মৃত্যুর পর ব্যাকট্রিয় গ্রিকদের কাছে মৌর্যদের পরাজয়। তবে সর্বদা যুদ্ধে লিপ্ত থাকলেই যে কোন সাম্রাজ্যের সামরিক দিক শক্তিশালী হবে তা নয়। সেজন্য সম্রাট অশোকের অহিংস নীতিকে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসাবে পুরোপুরি দায়ী করা ঠিক নয়।

ব্রাহ্মণদের অসন্তোষ ঃ মৌর্য সম্রাট অশোকের 'দণ্ডসমতা' ও 'ব্যবহার সমতা' নীতির ফলে ব্রাহ্মণদের অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। কারণ তারা তাদের প্রাপ্য বিশেষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পরোক্ষ কারণ হিসাবে ব্রাহ্মণ শ্রেণির অসন্তোষের কথা অনেকে মনে করেন বিবেচনা করেন। তাছাড়া বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অনুরাগী অনুরাগী সম্রাট অশোক পশুবলি প্রথা নিষিদ্ধ করলে ব্রাহ্মণদের  একটি আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়।

প্রশাসনিক দুর্বলতা ঃ সম্রাট অশোকের পরবর্তী মৌর্য সম্রাটরা ছিলেন অযোগ্য, অপদার্থ শাসক। ফলে মৌর্য প্রশাসন সম্রাট অশোকের পর আর শক্তিশালী হতে পারেনি।

আনুগত্যহীনতা ঃ সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর মৌর্য সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় রাজশক্তির দুর্বলতা দেখা যায়।  ফলে সম্রাটের অধীনে থাকা উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী, জমিদারদের সম্রাটের প্রতি আনুগত্যহীনতা প্রকাশ পায়।

আঞ্চলিক বিদ্রোহ ঃ মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে প্রাদেশিক গোষ্ঠীর নেতারা শক্তিশালী হতে শুরু করে। রাজার দুর্বলতার সুযোগে তারা বিভিন্ন সময়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। যা মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের একটি প্রধান কারণ।

অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঃ সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের পর বিভিন্ন জনকল্যাণকামী কাজের ফলে মৌর্য অর্থভাণ্ডার খুব দ্রুত শেষ হতে থাকে। ফলে বিশাল সংখ্যক সৈন্যের বেতন দিতে অসমর্থ হয় এবং  তাদের সমর্থন হারান, যা প্রতিটি রাষ্ট্রের পক্ষে ক্ষতিকর।

Post a Comment

Previous Post Next Post