যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে সুয়েজ খাল খননের ভূমিকা -
শিল্পায়নের প্রসারের ফলে পণ্য পরিবহণের জন্য প্রাকৃতিক জলপথের পাশাপাশি কৃত্রিম খাল খননের কাজও শুরু হয়েছিল। শিল্পোন্নত দেশগুলি যেসব কৃত্রিম খাল খনন করেছিলেন সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল সুয়েজ খাল। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে সুয়েজ খাল বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যেমন -
সুয়েজ খাল খননের উদ্দেশ্য ঃ পশ্চিমি শিল্পোন্নত দেশগুলি জলপথে আফ্রিকা মহাদেশের চারপাশের সুদীর্ঘ পথ সম্পূর্ণ ঘুরে প্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম ছিল। পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্যের যোগাযোগ সহজ করার জন্য সুয়েজ খাল খননের প্রয়োজনীয়তা লক্ষ্য করা যায়। এই উদ্দেশ্যে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্স মিশরের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে সুয়েজ খাল খননের কাজ শুরু করে।
ইংল্যান্ডের ভূমিকা ঃ ভারতে যাতায়াতের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড সুয়েজ খালের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় উদ্যত হয়েছিল। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খাল অঞ্চলে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের যৌথ 'কনডোমনিয়ান' গঠিত হয়। এর ফলে সুয়েজ খাল অঞ্চলে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
যাতায়াতের সূচনা ঃ ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে থেকে সুয়েজ খাল অঞ্চলে থেকে বাণিজ্যিক ভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক প্রভৃতি ইউরোপীয় দেশগুলি প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের বাণিজ্যের কাজে এই খাল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে থাকে।
নিরাপত্তা ঃ সুয়েজ খাল খননের পর এটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এখানে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন করার অধিকার পায় ইংল্যান্ড। ফলে সুয়েজ খাল এবং এর নিকটবর্তী অঞ্চলে মিশরের কর্তৃত্ব এক প্রকার বিলুপ্ত হয়ে যায়।
ঔপনিবেশিক শক্তি বৃদ্ধি ঃ সুয়েজ খাল ব্যবহার করার ফলে প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক যোগাযোগ গড়ে উঠলে বিভিন্ন দেশের ঔপনিবেশিক শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। যেমন -
(i) সুয়েজ খাল ব্যবহার করার ফলে ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন আরও শক্তিশালী হয়।
(ii) ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
মূল্যায়ন ঃ সুয়েজ খাল খননের ফলে জলপথে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগ আরও সহজ হয়ে উঠলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ফলে উপনিবেশগুলির ওপর ইউরোপীয় শক্তিগুলির নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় হয়ে ওঠে।