প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে কিভাবে দুটি শক্তি জোটের উদ্ভব ঘটে

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব নবম শ্রেণির ইতিহাস (Class nine History) চতুর্থ অধ্যায় (4th chapter) শিল্পবিপ্লব, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ থেকে একটি 4 মার্কের প্রশ্ন - "প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে কিভাবে দুটি শক্তি জোটের উদ্ভব ঘটে"

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপে পরস্পরবিরোধী দুটি শক্তি জোট -

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে মধ্যবর্তী সময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিবাদ বৃদ্ধি পায়। ফলে গোটা ইউরোপ পরস্পর বিরোধী দুটি সশস্ত্র শিবিরে বা শক্তিজোটে বিভক্ত হয়ে যায়। এই দুটি শক্তি জোট হল - [1] ত্রিশক্তি চুক্তি বা ট্রিপল এলায়েন্স (Triple Alliance) এবং [2] ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ট্রিপল আঁতাঁত (Triple Entente). নিন্মে এই দুই শক্তিজোট সম্পর্কে আলোচনা করা হল -


ত্রিশক্তি চুক্তি বা ট্রিপল এলায়েন্স ঃ ইতালি, জার্মানি ও অস্ট্রিয়াকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল 'ত্রিশক্তি চুক্তি' বা 'ট্রিপল এলায়েন্স'। ত্রিশক্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার বিবরণ -

     (i) দ্বিশক্তি চুক্তি ঃ বিসমার্কের উদ্যোগে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া, জার্মানি ও অস্ট্রিয়াকে নিয়ে 'ড্রাইকাইজারবুন্ড' বা 'তিন সম্রাটের চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরে রাশিয়া এই চুক্তি থেকে সরে আসে এবং ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে 'দ্বিশক্তি চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়।

     (ii) ত্রিশক্তি চুক্তি ঃ ফ্রান্সের সঙ্গে ইতালির বিরোধের ফলে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ইতালি দ্বিশক্তি চুক্তিতে অংশ নেয়। ফলে দ্বিশক্তি চুক্তি পরিণত হয় 'ত্রিশক্তি চুক্তি'-তে।


ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ট্রিপল আঁতাঁত ঃ ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের বিসমার্কের পদচ্যুতির পর জার্মানি উগ্র সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করলে ইউরোপে জার্মান-বিরোধী শক্তিজোট গঠনের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই সময় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও রাশিয়াকে নিয়ে গড়ে ওঠে 'ত্রিশক্তি মৈত্রী' বা 'ট্রিপল আঁতাঁত'। ত্রিশক্তি মৈত্রী গঠনের বিবরণ -

     (i) ফ্রাঙ্কো-রুশ চুক্তি ঃ ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে গোপন ভাবে ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে ফ্রাঙ্কো-রুশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

     (ii) ইঙ্গ-ফরাসি মৈত্রী চুক্তি ঃ বিভিন্ন কারণে জার্মানির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ইংল্যান্ড ফ্রান্সের সঙ্গে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ইঙ্গ-ফরাসি মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তিকে 'আঁতাঁত কোর্দিয়াল' বলা হয়। 

     (iii) ইঙ্গ-রুশ চুক্তি ঃ ইতিমধ্যে ইংল্যান্ড রাশিয়ার সঙ্গে যাবতীয় বিরোধ মিটিয়ে নেয় এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে দুই দেশের মধ্যে ইঙ্গ-রুশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

মূল্যায়ন ঃ বিংশ শতকের শুরু থেকেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পারস্পারিক সন্দেহ ও বিদ্বেষ ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে পরস্পর বিরোধী দুটি শক্তিজোটে পৃথক করে দেয়। এরফলে ইউরোপের শান্তি একটি সরু সুতোয় ঝুলে থাকার অবস্থায় চলে আসে। অবশেষে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে সেরাজেভোর হত্যাকাণ্ডের ফলে এই সুতো ছিঁড়ে যায় এবং বিশ্ববাসী 'প্রথম বিশ্বযুদ্ধ'-এর সম্মুখীন হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post