ব্রিটিশ শাসনকালে রপ্তানিকারক দেশ থেকে আমদানিকারক দেশ হিসাবে ভারতবর্ষ -
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধ এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে জয় লাভ করায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে বাংলায় এবং পরে সমগ্র ভারতে নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম করতে সচেষ্ট হয়। ব্রিটিশদের বিভিন্ন নীতি ও আইনের ফলে ভারতের দেশীয় বাণিজ্য ধ্বংস হয় এবং ধীরে ধীরে ভারত রপ্তানিকারী দেশ থেকে আমদানিকারী দেশে পরিণত হয়। নিন্মে ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতবর্ষ কিভাবে রপ্তানিকারী দেশ থেকে আমদানিকারী দেশে পরিণত হল তা আলোচনা করা হল -
ভারতীয় বাণিজ্যে আঘাত ঃ ইউরোপের শিল্পপতিদের বিরোধিতায় ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন -
(i) ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে বাংলার রেশম বস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
(ii) ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে ভারত থেকে রঙিন সুতিবস্ত্র আমদানি নিষিদ্ধ করা হয় এবং ভারত থেকে আমদানি করা সুতিবস্ত্রের ওপর প্রচুর আমদানি শুল্ক চাপিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্প বিপ্লব ঃ ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটার ফলে সেদেশে অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ শিল্প সামগ্রী উৎপাদিত হতে থাকে। সেগুলি বিক্রির জন্য ভারতের বাজারে আসতে থাকে। এরফলে ভারতীয় পণ্যের বিক্রি কমে যায় এবং ভারতের কুটির শিল্প ধ্বংসের দিকে এগোতে থাকে।
অবাধ বাণিজ্য নীতি ঃ ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইনের মাধ্যমে ভারতের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান ঘটানো হয় এবং অন্যান্য ব্রিটিশ বণিকদের এদেশে অবাধ বাণিজ্যের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ফলে ভারতীয় বাণিজ্যের ধ্বংসসাধন হয়।
শুল্ক বৃদ্ধি ঃ ব্রিটিশ সরকার ইংল্যান্ডে পাঠানো ভারতীয় পণ্যের ওপর বিপুল পরিমাণ শুল্ক চাপিয়ে দেয়। ফলে ভারতের পণ্য দ্রব্য ব্রিটেনের বাজারে বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা যায়।
আমদানি বৃদ্ধি ঃ বিভিন্ন সরকারি নীতি ও আইনের মাধ্যমে ভারতের দেশীয় শিল্প বাণিজ্য ধ্বংস হয় এবং ভারত থেকে বিদেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ভারত বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ পণ্যের আমদানি করতে থাকে। এইভাবে ভারত ক্রমশ রপ্তানি কারক দেশ থেকে আমদানিকারী দেশে পরিণত হয়।
মূল্যায়ন ঃ ইংরেজরা ভারতের রাজনৈতিক অধিকার নিজেদের অধীনে নিয়ে ভারতের শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নানা নিয়ম প্রণয়ন করতে থাকে। ফলে ভারতের দেশীয় শিল্পের অবসান ঘটে এবং ভারত ক্রমশ বিদেশি পণ্য সামগ্রীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।