প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব নবম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ের প্রশ্ন - "ভার্সাই সন্ধিকে জবরদস্তিমূলক সন্ধি বলে কেন" / "ভার্সাই সন্ধির অবিচার গুলি কি ছিল" / "ভার্সাই সন্ধির সমালোচনা করো" -এই প্রশ্নটি।
ভার্সাই সন্ধিকে জবরদস্তিমূলক সন্ধি বলার কারণ / ভার্সাই সন্ধির সমালোচনা -
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হলে বিজয়ী মিত্রপক্ষ ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তার ওপর ভার্সাই সন্ধি চাপিয়ে দেয়। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক এই সন্ধির সমালোচনা করেছেন। জার্মান ঐতিহাসিকগণ ভার্সাই সন্ধিকে 'একতরফা', 'জবরদস্তিমূলক সন্ধি' বা ম্যাকিয়াভেলির সন্ধি বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে -
প্রতিহিংসা ঃ ভার্সাই সন্ধির শর্তাদি রচনার সময় জার্মান প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোন আলোচনা করা হয়নি। মিত্রপক্ষ সন্ধি রচনাকালে প্রতিহিংসার মনোভাব নিয়ে কাজ করেছিল। তারা যুক্তিহীন ভাবে জার্মানির আপত্তিগুলি নাকচ করে। জার্মানির ওপর তারা বিমান আক্রমণের হুমকি দিয়ে এই সন্ধি স্বাক্ষরে বাধ্য করেছিল।
অনুদারতা ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পিছনে একমাত্র জার্মানিই দায়ী ছিল না। অথচ এই যুদ্ধের জন্য মিত্রপক্ষ একমাত্র জার্মানিকেই দায়ী বলে ঘোষণা করেছিল। ভার্সাই সন্ধির দ্বারা মিত্রপক্ষ জার্মানির ওপর বিভিন্ন কঠোর কর চাপিয়ে দিয়েছিল। তাই জার্মানি প্রথম থেকেই ভার্সাই সন্ধি ভেঙে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছিল।
ন্যায়নীতি লঙ্ঘন ঃ মিত্রপক্ষ বিভিন্ন ন্যায়নীতি লঙ্ঘন করে জার্মানির ওপর চরম অবিচার করে। যেমন -
(i) মিত্রপক্ষের সামরিক শক্তি হ্রাস না করে শুধুমাত্র একা জার্মানির সামরিক শক্তির হ্রাস করা হয়।
(ii) জার্মানির উপনিবেশগুলি কেড়ে নেওয়া হয়।
(iii) জাতীয়তাবাদ উপেক্ষা করে জার্মানির বহু অঞ্চল অ-জার্মান অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।
বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক শর্ত ঃ মিত্রশক্তি বিভিন্ন ভাবে জার্মানিকে অর্থনৈতিক ভাবে পঙ্গু করার চেষ্টা করেছিল। যেমন -
(i) জার্মানির ওপর ৬৬০ কোটি পাউন্ডের ক্ষতিপূরণ চাপানো হয়েছিল।
(ii) জার্মানির কয়লা সমৃদ্ধ সার অঞ্চলটিকে মিত্রপক্ষ কেড়ে নেয়।
(iii) জার্মানির বিভিন্ন খনিজ সম্পদ, পণ্যের বাজার, জলপথ ইত্যাদির ওপর মিত্রপক্ষ তাদের অধিকার কায়েম করে।
মূল্যায়ন ঃ জার্মানিকে সব দিক থেকে পঙ্গু করে তার কাছ থেকে বিপুল ক্ষতিপূরণ চাওয়া ছিল মিত্রপক্ষের একটি অদূরদর্শী পদক্ষেপ। ফলে জার্মানি প্রথম থেকেই ভার্সাই সন্ধি ভেঙে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে। ভার্সাই সন্ধি জার্মান বাসীর মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল। ফলে ভবিষ্যতে জার্মানি প্রতিশোধ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকে।
আরও পড়ুন ঃ