ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক শর্তাবলির ত্রুটি -
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভের পর মিত্রপক্ষ পরাজিত জার্মানির ওপর 'জবরদস্তিমূলক ভার্সাই সন্ধি' চাপিয়ে দিয়েছিল। ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির ওপর অবাস্তব ও চরম অনুদার অর্থনৈতিক শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল প্রকৃতপক্ষে ত্রুটিযুক্ত। নিন্মে ভার্সাই সন্ধির অর্থনৈতিক শর্তাবলির ত্রুটি গুলি আলোচনা করা হল -
বৈষম্যমূলক ব্যবহার ঃ ভার্সাই সন্ধির দ্বারা সামগ্রিক ভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানির সঙ্গে বৈষম্যমূলক ব্যবহার করা হয়। ঐতিহাসিক ল্যাংসামের মতে ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির কাছ থেকে প্রায় ২৫ হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ড, ৭০ লক্ষ জনসমষ্টি, ১৫ শতাংশ কৃষিজমি, ১২ শতাংশ গবাদি পশু, ১০ শতাংশ বড়ো শিল্প কেড়ে নেওয়া হয়।
খনিজ সম্পদ ঃ
(i) জার্মানির কয়লা সমৃদ্ধ সার অঞ্চল আগামী ১৫ বছরের জন্য ফ্রান্সের দখলে আনা হয়।
(ii) এছাড়া অন্যান্য কয়েকটি বিশেষ খনিজ সম্পদ ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি দেশকে সরবরাহ করতে জার্মানিকে বাধ্য করা হয়।
ক্ষতিপূরণের বোঝা ঃ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জার্মানিতে খাদ্যাভাব, বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি প্রভৃতি চরম আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে মিত্রপক্ষ জার্মানির ওপর ৬৬০ কোটি পাউন্ড ক্ষতিপূরণের বোঝা চাপিয়ে দিলে জার্মানির পক্ষে তা পরিশোধ করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
মূল্যায়ন ঃ ভার্সাই সন্ধির দ্বারা জার্মানির ওপর চাপানো ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য জার্মানির ছিল না। এর ফলে জার্মানি ভার্সাই চুক্তি ভেঙে দ্রুত বেড়িয়ে আসার চেষ্টায় ছিল। এপ্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রাইকার বলেছেন, ভার্সাই সন্ধির নৈতিক এবং বাস্তব উভয় দিকই ছিল ত্রুটিপূর্ণ।