ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মেটারনিক ব্যবস্থার প্রয়োগ উল্লেখ করো

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মেটারনিক ব্যবস্থার প্রয়োগ -

১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিক ইউরোপে যে রক্ষণশীল নীতি কার্যকর করেছিলেন তা মেটারনিক ব্যবস্থা নামে পরিচিত। মেটারনিক নিজ রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া-সহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশেও তাঁর নীতির প্রয়োগ করেছিলেন। যেমন -

অস্ট্রিয়া ঃ ফরাসি বিপ্লবের আধুনিক ভাবধারাগুলি অস্ট্রিয়ায় প্রবেশ বন্ধ করতে মেটারনিক -

     (i) অস্ট্রিয়ার স্কুল-কলেজগুলিতে ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পঠনপাঠন নিষিদ্ধ করেন।

     (ii) উদারপন্থী ছাত্র এবং শিক্ষকদের কারারুদ্ধ করেছিলেন।

     (iii) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্যাথলিক গির্জার দায়িত্ব দেন।

     (iv) অস্ট্রিয়ায় শিল্প বিপ্লবের অগ্রগতির বিরোধিতা করেন।

জার্মানিতে ঃ মেটারনিক অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি জার্মান 'বুন্ড' বা জার্মান রাজ্য সমবায়ের সভাপতি ছিলেন। এই পদে থাকাকালীন তিনি -

     (i) জার্মানির ছাত্র সংগঠন এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষনা করেছিলেন। পাশাপাশি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন।

     (ii) জার্মানিতে ছাত্র আন্দোলন এবংজাতিয়তাবাদ রোধ করার উদ্দেশ্যে মেটারনিক সেদেশে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির শাসকদের কার্লসবাড ডিক্রি প্রয়োগে বাধ্য করেন।

ইউরোপের অন্যান্য দেশ ঃ অস্ট্রিয়া ও জার্মানির পাশাপাশি মেটারনিক ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতেও বিভিন্ন পরিবর্তন আনেন। যেমন -

     (i) শক্তি সমবায়ের সহায়তায় ইতালির নেপলস, পিডমেন্ট, মডেনা, পার্মা ইত্যাদি রাজ্য সহ স্পেনের গণআন্দোলনগুলিকে দমন করেন। 

     (ii) গ্রিসের স্বাধীনতা আন্দোলনে রাশিয়াকে সহায়তা দানে বাধ্য করেছিলেন।

     (iii) ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ট্রপোর ঘোষণাপত্র জারি করেন এবং বিপ্লবের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন বা নতুন সংবিধান গ্রহণ নিষিদ্ধ করেন।

মূল্যায়ন ঃ মেটারনিক তাঁর নীতিগুলির মাধ্যমে মূলত দুটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করতে চেয়েছিলেন। একটি হল তিনি ইউরোপের বেশিরভাগ জাতিকে অস্ট্রিয়ার অধীনে রাখতে চেয়েছিলেন এবং অন্যটি হল তিনি গোটা ইউরোপ জুড়ে রাজতন্ত্র স্থাপন করতে চেয়েছিলেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post