অস্ট্রিয়ায় মেটারনিক ব্যবস্থার প্রয়োগ -
অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিক ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপে যে রক্ষণশীল এবং দমনমূলক নীতি চালু করেছিলেন তাকে মেটারনিক ব্যবস্থা বলা হয়। তিনি মেটারনিক ব্যবস্থার প্রয়োগ তাঁর নিজ রাষ্ট্র অস্ট্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি করেছিলেন। এগুলি হল -
জাতি-বৈরিতা ঃ অস্ট্রিয়ায় মেটারনিক এক জাতি ও ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীর মানুষদের ক্ষিপ্ত করে তোলেন। তিনি একদিকে যেমন বোহেমিয়ার শাসনে জার্মান বাহিনী নিযুক্ত করেছিলেন অন্যদিকে তেমনই লম্বার্ডির শাসনে হাঙ্গেরির বাহিনীকে নিযুক্ত করেছিলেন।
স্বাধীনতা হরণ ঃ অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলিকে মেটারনিক নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি মানুষের বাকস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন। তাছাড়া মেটারনিকের সময়ে ডাক বিভাগের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিগত চিঠিগুলিও খুলে দেখা হত, যাতে কোন ব্যক্তি রাষ্ট্র বিরোধী কথা লেখে।
প্রগতিশীলতা প্রতিরোধ ঃ তীব্র রক্ষণশীলতা এবং দমননীতির মাধ্যমে মেটারনিক অস্ট্রিয়ায় প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদীদের কণ্ঠরোধ করেছিলেন। তাঁর অনুমতি ব্যতীত সেদেশে কোন বিদেশি বই, সংবাদপত্র এমনকি বিদেশি অধ্যাপকদেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।
ছাত্র ও শিক্ষকদের দমন ঃ অস্ট্রিয়ার উদারপন্থী শিক্ষক এবং ছাত্রদেরকে মেটারনিক কারারুদ্ধ করেছিলেন। তিনি শ্রেণীকক্ষ, ছাত্র ও শিক্ষকদের গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য গোয়েন্দা নিয়োগ করেছিলেন।
পাঠ্যসূচীর পরিবর্তন ঃ অস্ট্রিয়ায় প্রগতিশীলতা রোধ করার জন্য মেটারনিক স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচীর পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি সেদেশে ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি বিষয়ের পড়াশোনা নিষিদ্ধ করেছিলেন।
মূল্যায়ন ঃ মেটারনিক তাঁর নীতিগুলির মাধ্যমে ইউরোপে পুরাতন ভাবধারাগুলির ধ্বংস কিছুদিন বিলম্বিত করেছিলেন মাত্র। তা কখনো আটকাতে পারেননি। ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীকালে ইউরোপে যে পরিবর্তনের জোয়ার এসেছিল সেগুলির বিরুদ্ধে একটা ভঙ্গুর ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখেছিলেন, আর কিছুই নয়। শেষপর্যন্ত ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি বিপ্লব সংঘটিত হলে মেটারনিকেরও পতন ঘটে।