শিল্প বিপ্লবের আলোচনায় কার্ল মার্কসের মতামত -
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের প্রবক্তা জার্মান দার্শনিক কার্ল হেনরিখ মার্কস অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে বিকশিত শিল্প বিপ্লবের সমালোচনা করেছেন। কার্ল মার্কস শিল্প বিপ্লবের সমালোচনা করে যে বক্তব্যগুলি তুলে ধরেছেন, তা হল -
মালিকের একাধিপত্য ঃ যেহেতু কাঁচামাল, জমি, মূলধন এসবই প্রকৃতির দান সেহেতু এসবের মালিক সবাই। অথচ বাস্তবে পুঁজিপতি মালিক শ্রেণি এই উপাদানগুলির ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের প্রভাবশালী করে তোলে।
শ্রমশক্তি ক্রয় করা ঃ শিল্প বিপ্লবের পর পুঁজিপতি মালিক শ্রেণি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে সামান্য অর্থের বিনিময়ে দরিদ্র শ্রমিকদের শ্রমশক্তি ক্রয় করে এইসব প্রাকৃতিক উপাদানকে সম্পদ বা পণ্যে রূপান্তরিত করে নিজেরা পাহাড় সমান পুঁজি হস্তগত করে। কিন্তু শ্রমিকরা বঞ্চিত থাকে।
উদ্বৃত্ত মূল্য ঃ শিল্প পণ্য উৎপাদনের জন্য মালিকরা শ্রমিকদের যে পরিমাণ মজুরি প্রদান করে তার বিনিময়ে তারা শ্রমিকদের কাছ থেকে আরও বেশি উৎপাদন করিয়ে নেয়। এরফলে মালিক শ্রেণির কাছে অতিরিক্ত পুঁজি জমা হয়। মার্কসের মতে এই অতিরিক্ত সম্পদ হল 'উদ্বৃত্ত মূল্য'।
সম্পদের বণ্টন ঃ মার্কস বলেছেন, শিল্প ক্ষেত্রে যাবতীয় উৎপাদনের কাজ চলে শ্রমিকের শ্রম দ্বারা। তাই উদ্বৃত্ত মূল্য বা শিল্পের লভ্যাংশ শ্রমিকদেরই পাওয়া উচিত।
বঞ্চিত শ্রমিক ঃ উদ্বৃত্ত সম্পদ শ্রমের মাপকাঠিতেই শ্রমিকদের মধ্যে বন্টিত হওয়া উচিত বলে কার্ল মার্কস মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে এই অতিরিক্ত লভ্যাংশ থেকে শ্রমিক শ্রেণি বঞ্চিত হয় এবং মালিক শ্রেণিই সমগ্র উদ্বৃত্ত সম্পদ আত্মসাৎ করে।
মুক্তির উপায় ঃ শিল্প ক্ষেত্রে এই অন্যায় ও বৈষম্য থেকে মুক্তির উপায় হিসাবে মার্কস বলেছেন, শ্রমিক শ্রেণির দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার ওপর শ্রমিকের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা।
মূল্যায়ন ঃ শিল্প বিপ্লবের ফলে সৃষ্টি হওয়া শ্রমিক শ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে কার্ল মার্কস শ্রমিক শ্রেণিকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে কার্ল মার্কস শ্রমিক সংগঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।