প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চলেছি নবম শ্রেণির ইতিহাস (Class nine History) পঞ্চম অধ্যায় (5th chapter) শিল্পবিপ্লব, উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ থেকে একটি 4 মার্কের প্রশ্ন - "রুশ বিপ্লবের কারণ গুলি আলোচনা করো" - এই প্রশ্নটি অন্য ভাবেও আসতে পারে। যেমন - "রুশ বিপ্লবের কারণ গুলি কি কি" / "রুশ বিপ্লবের কারণ গুলি লেখ" / "নভেম্বর বিপ্লবের কারণ কি ছিল" / "বলশেভিক বিপ্লবের কারণ গুলি কি কি"।
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লব / নভেম্বর বিপ্লব / বলশেভিক বিপ্লবের কারণ -
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার জার দ্বিতীয় নিকোলাসের রাজত্বকালে রুশ বিপ্লব / নভেম্বর বিপ্লব / বলশেভিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এই বিপ্লবের ফলে রাশিয়ার শোষিত, নিপীড়িত, বঞ্চিত মানুষেরা তাদের ন্যায্য অধিকার পায় এবং রাশিয়ায় একটি শোষণ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। নিন্মে রুশ বিপ্লব / নভেম্বর বিপ্লব / বলশেভিক বিপ্লবের কারণ গুলি আলোচনা করা হল -
মধ্যযুগের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা ঃ ঊনবিংশ শতকে ইউরোপে প্রগতিশীল ভাবধারার প্রসার ঘটে। কিন্তু রাশিয়ায় সেই সময়ও মধ্যযুগের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু ছিল। রোমানভ বংশের জারগণ ঐশ্বরিক ক্ষমতায় বিশ্বাসী হয়ে রাশিয়ায় একটি স্বৈরতন্ত্র স্থাপন করেছিল।
কৃষকদের দুরাবস্থা ঃ ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটান। কিন্তু কৃষকরা জমির ব্যক্তিগত মালিকানা না পাওয়ায় তাদের বিশেষ উন্নতি ঘটেনি কারণ কৃষকদের জমির অধিকার ছিল গ্রামের 'মির'-গুলির হাতে। ফলে কৃষকরা মির-গুলির দ্বারা শোষণের শিকার হত।
শ্রমিকদের দুরাবস্থা ঃ সামান্য বেতন, সীমাহীন শোষণ, অনাহার, অর্ধাহার, বস্তি জীবনের দুরাবস্থা ইত্যাদি রাশিয়ার শ্রমিকদের জীবনে অভিশাপরূপে নেমে আসে। ঊনবিংশ শতকের প্রথম থেকেই শ্রমিকরা উপলব্ধি করে যে, জারতন্ত্রের পতন না ঘটলে রাশিয়ার শ্রমিকদের উন্নতি ঘটবে না।
অধিকারহীনতা ঃ জারের শাসনকালের রাশিয়ার জনগণ ভোটাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিভিন্ন নাগরিক অধিকার ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত ছিল। বেত্রাঘাত, আটক, সাইবেরিয়ায় নির্বাসন ইত্যাদি দমনমূলক শাস্তির মাধ্যমে জারগণ রাশিয়ার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা দমন করে দিতেন।
রাসপুটিনের ভূমিকা ঃ জার দ্বিতীয় নিকোলাসের শাসনকালে রাসপুটিন নামক একজন ভন্ড সন্ন্যাসী ছিলেন। শাসন পরিচালনা, আমলা-সেনাপতি-মন্ত্রী প্রভৃতি পদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ভণ্ড সন্ন্যাসীর ব্যাপক প্রভাব ছিল। যা রাশিয়ার জনগণের মনে ক্ষোভ জন্ম দিয়েছিল।
১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ঃ রাশিয়ায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু তা রাশিয়ার জনগণের মনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করেছিল। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লবের পটভূমি তৈরি করেছিল।
সন্ত্রাস ঃ ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পর জারের প্রধানমন্ত্রী পিটার স্টোলিপিন-এর নেতৃত্বে রাশিয়ায় ব্যাপক সন্ত্রাসের শাসন শুরু হয়। এই সময় রাশিয়ার 'ব্লাক হানড্রেড' নামক কুখ্যাত অপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং বিপ্লবী কৃষক ও শ্রমিকদের পিছনে লেলিয়ে দেওয়া হয়। জারের নির্দেশে হাজার হাজার বলশেভিক কর্মীকে গোপনে হত্যা, নির্বাসনে পাঠানো হয়।
রুশীকরণ নীতি ঃ জারতন্ত্রের আমলে রাশিয়া বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কারাগারে পরিণত হয়েছিল। রাশিয়ায় বসবাসকারী ফিন, পোল, আর্মেনীয়, জর্জীয়, তুর্কি, ইউক্রেনীয় প্রভৃতি জাতিগুলির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি মুছে ফেলার জন্য রাজ তাদের ওপর রাশিয়ার ভাষা ও সংস্কৃতি জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
বুদ্ধিজীবীদের অবদান ঃ রাশিয়ার বিখ্যাত সাহিত্যিক টলস্টয়, পুশকিন, তুর্গেনিভ, গোর্কি প্রমুখের উপন্যাসগুলি রাশিয়ার যুব সমাজের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। বুকানিন, কার্ল মার্কসের চিন্তাধারা জনগণের মনে বৈপ্লবিক চেতনা জাগ্রত করে বিপ্লবের পথ প্রস্তুত করে।
ত্রুটিপূর্ণ বিদেশনীতি ঃ জারতন্ত্রের অপদার্থতা এবং দুর্বলতা জনগণের সামনে ফুটে ওঠে রাশিয়ার ত্রুটিপূর্ণ বিদেশনীতির ফলে। ক্ষুদ্রাকৃতি জাপানের কাছে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই জার্মানির কাছে সুবিশাল রাশিয়ার পরাজয় দেশের আত্মসম্মান ও মর্যাদাহানি ঘটায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রাশিয়ার যোগদানের ফলে দেশে ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১ কোটি রাশিয়ান সৈন্যের খাবার, বেতন, যুদ্ধের রসদ জোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। এরফলে যুদ্ধে প্রায় ৬০ লক্ষ রাশিয়ান সৈন্যের মৃত্যু, দেশে বেকারত্ব সৃষ্টি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি ঘটনা রাশিয়ার পরিবেশকে ভয়ঙ্কর করে তুলেছিল।
এপ্রিল থিসিস ঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ার ভয়ানক পরিস্থিতিতে প্রজাতান্ত্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কেরেনস্কি বলশেভিকদের ওপর অত্যাচার শুরু করে। এই সময় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক নেতা লেনিন বলশেভিক কর্মীদের উদ্দেশ্যে তাঁর বিখ্যাত এপ্রিল থিসিস ঘোষণা করেন। তিনি বলশেভিক কর্মীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পরামর্শ প্রদান করেন।
মূল্যায়ন ঃ লেনিনের পরামর্শক্রমে ট্রট্স্কি-র নেতৃত্বে রাশিয়ার 'লালফৌজ' বাহিনী রাজধানী পেট্রোগ্যাড দখল করে নিলে কেরেনস্কি ভয়ে পলায়ন করেন। এরপর ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে বলশেভিকরা রাশিয়ার শাসন ক্ষমতা দখল করে নেয়। এরফলে রাশিয়া বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন ভি আই লেনিন।
আরও পড়ুন ঃ