বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ -
উনিশ শতকের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক ছিলেন কার্ল মার্কস এবং তাঁর সহযোগী ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস। তাঁরা তাঁদের 'দাস ক্যাপিটাল' গ্রন্থে বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি ও প্রমানের ওপর ভিত্তি করে ইতিহাস ও অর্থনীতির নতুন ধারণার অবতরণ করেন। তাঁদের এই মতবাদ 'বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ' হিসাবে পরিচিত।
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের প্রবক্তা -
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের প্রবক্তা হলেন কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস।
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের মূল বক্তব্য -
বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের মূল বক্তব্য নিন্মে আলোচনা করা হল -
ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ঃ কার্ল মার্কস মনে করেন, অর্থনৈতিক শক্তিই সকল প্রতিষ্ঠান ও আইনের জন্ম দেয়। বিশ্ব প্রকৃতির পরিবর্তনের মত নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে সমাজেরও পরিবর্তন হয়। অর্থনৈতিক প্রভাবের ফলেই মানবসমাজের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়।
উদ্বৃত্ত মূল্য ঃ কার্ল মার্কস মনে করেন, অতীতের প্রতিটি সমাজ ব্যবস্থাতেই দুটি পরস্পর-বিরোধী শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল। একটি হল শোষিত শ্রেণি এবং অপরটি হল পুঁজিপতি ধনী তথা শাসক ও শোষক শ্রেণি। ধনী পুঁজিপতিরা বিপুল মুনাফার লোভে দরিদ্র শ্রেণির শ্রম ক্রয়ের দ্বারা তাদের শোষণ করে। এরফলে সৃষ্টি হয় ধনী ও দরিদ্রের সংঘাত।
শ্রেণি সংগ্রাম ঃ আধুনিক সমাজে পুঁজিপতি মালিক শ্রেণি এবং শোষিত দরিদ্র শ্রমিকদের সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে। এই সংঘাতই হল শ্রেণি সংগ্রাম। কার্ল মার্কস বলেন, মানব সভ্যতার ইতিহাসই হল শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের সংগ্রামের ইতিহাস। শ্রমিকরা যদি উৎপাদনের উপকরণগুলি দখল করে নেয় তাহলে সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান ঘটবে। ফলে সমাজে ধনী এবং দরিদ্রের বৈষম্য দূর হবে এবং সমাজে অর্থনৈতিক সাম্য তৈরি হবে, সমাজে সর্বহারার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। কার্ল মার্কস বলেছেন এভাবেই গড়ে উঠবে সমাজতান্ত্রিক সমাজ, যে সমাজে রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কোন প্রয়োজন হবে না।
মূল্যায়ন ঃ কার্ল মার্কস তাঁর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের দ্বারা পুঁজিপতি শ্রেণির বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণির লড়াই এবং তাদের অধিকার আদায়ের কথা বলেছেন। কার্ল মার্কস শ্রমিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে 'দুনিয়ার মজদুর এক হও' স্লোগানের দ্বারা সাধারণ শ্রমিকদের আবেদন জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন ঃ