শিল্প বিপ্লবের পরবর্তীকালে শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে সমাজতন্ত্রবাদ ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে যেসব চিন্তাবিদ এই ভাবধারা প্রচার করেন তাদের সাধারণভাবে আদি সমাজতন্ত্রবাদী হিসাবে পরিচিত। সাঁ সিমোঁ এবং শার্ল ফুরিয়ের ছাড়াও আদি সমাজতন্ত্রবাদীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চিন্তাবিদ রবার্ট ওয়েন, লুই ব্লাঁ ও প্রুধোঁ। নিন্মে এদের সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
রবার্ট ওয়েন ( জন্ম - ১৭৭১, মৃত্যু - ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ) ঃ 'ব্রিটিশ সমাজতন্ত্রবাদের জনক' রূপে পরিচিত রবার্ট ওয়েন সর্বপ্রথম 'সোশ্যালিজম' বা 'সমাজতন্ত্রবাদ' কথাটির প্রচলন করেন। রবার্ট ওয়েন শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য একটি আদর্শ কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই কারখানায় নিযুক্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করেছিলেন। শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি স্বয়ংশাসিত সমবায় বিপণি স্থাপন করেন। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর লেখা 'নিউ ভিউ অব সোসাইটি এবং 'রিপোর্ট টু দ্য কাউন্টি অব ল্যানার্ক' দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ।
লুই ব্লাঁ / লুই ব্ল্যাঙ্ক (জন্ম - ১৮১১, মৃত্যু - ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দ) ঃ আদি সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে ফরাসি সমাজতন্ত্রী লুই ব্লাঁ ছিলেন অন্যতম। তিনি শ্রমিকদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কলকারখানা স্থাপন এবং শ্রমিকদের ভোটাধিকারের পক্ষপাতী লুই ব্লাঁ-এর লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল 'রিভিউ দ্যু প্রোগ্রেস' ও 'অর্গানাইজেশন অব লেবার' প্রভৃতি।
পিয়েরে জোসেফ প্রুধোঁ (জন্ম - ১৮০৯, মৃত্যু - ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ) ঃ জোসেফ প্রুধোঁ ছিলেন 'নৈরাজ্যবাদের জনক'। তিনি ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত, সম্পত্তি, রাষ্ট্র, গির্জা প্রভৃতির অবসানের মাধ্যমে নতুন সমাজ গঠনের কথা বলেছেন।
মূল্যায়ন ঃ আদি সমাজতন্ত্রী বা কল্পনাবিলাসী সমাজতন্ত্রীরা এমন এক সমাজের স্বপ্ন দেখেছেন যেখানে বক্তিগত সম্পত্তি বলে কিছু থাকবে না। তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সমাজের শ্রমিক শ্রেণির কল্যাণ করা।