টেলিগ্রাফ আবিষ্কার ও এই ব্যবস্থার প্রসার এর পরিচয় দাও

টেলিগ্রাফ আবিষ্কার ও এই ব্যবস্থার প্রসার -এর পরিচয় -

টেলিগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে কোন লিখিত বার্তার আসল কপি না পাঠিয়েও বার্তাটি এক স্থান থেকে অন্য কোন দূরবর্তী স্থানে পাঠানো যায়। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপে টেলিগ্রাফ যন্ত্রের ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। ঊনবিংশ শতকে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা শিল্পোন্নত দেশগুলির ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। নিন্মে টেলিগ্রাফ আবিষ্কার ও এই ব্যবস্থার প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করা হল -


আমেরিকায় সংযোগ ঃ ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আমেরিকায় ২০ হাজার মাইল দীর্ঘ টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপিত হয়। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে 'আটলান্টিক কেবল' প্রতিষ্ঠার ফলে টেলিগ্রাফের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের সাথে আমেরিকার যোগসূত্র স্থাপিত হয়।

ভারতে সংযোগ ঃ ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত ৩০ মাইল দীর্ঘ টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন করা হয়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সঙ্গে আগ্রা, মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের টেলিগ্রাফ সংযোগ তৈরি হয়।

আফ্রিকার সংযোগ ঃ ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে আফ্রিকার বিভিন্ন ঔপনিবেশিক অঞ্চলে টেলিগ্রাফ সংযোগ ঘটতে শুরু করে। যেমন -

     (i) ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের সঙ্গে ক্যানারি দ্বীপের টেলিগ্রাফ যোগাযোগ গড়ে ওঠে।

     (ii) ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে সেনেগালের সঙ্গে টেলিগ্রাফ যোগাযোগ তৈরি হয়।

অন্যান্য দেশে টেলিগ্রাফ সংযোগ ঃ উপরিউক্ত দেশ গুলি ছাড়াও অন্যান্য দেশে টেলিগ্রাফের সংযোগ। যেমন -

     (i) ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের একটি কোম্পানি চিনে সর্বপ্রথম টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু করে।

     (ii) ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ায় সর্বপ্রথম টেলিগ্রাফ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

     (iii) পরবর্তীকালে মালয়, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে টেলিগ্রাফ সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের সঙ্গে বিভিন্ন ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির টেলিগ্রাফ সংযোগ তৈরি হয়।

ঔপনিবেশিক আধিপত্য বৃদ্ধি ঃ টেলিগ্রাফের সংযোগের ফলে ঔপনিবেশিক আধিপত্যের বিস্তার ঘটতে থাকে। যেমন -

     (i) ইউরোপীয় শক্তিগুলি তাদের উপনিবেশগুলির সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়।

     (ii) টেলিগ্রাফ সংযোগের ফলে উপনিবেশগুলিতে বিদেশি শাসন এবং নিয়ন্ত্রণ আরও সুদৃঢ় হয়ে ওঠে।

     (iii)শিল্পোন্নত দেশগুলির বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়।

মূল্যায়ন ঃ টেলিগ্রাফ যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে গুরুত্বপূর্ণ খবর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত পৌঁছানোর সুবিধা হয়। টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা সাম্রাজ্যবাদের নয়া রূপ ফুটিয়ে তোলে। উপনিবেশগুলিতে বিদ্রোহের সময় সৈন্য প্রেরণ, দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ ইত্যাদি কাজে টেলিগ্রাফ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।

Post a Comment

Previous Post Next Post