তৃতীয় এস্টেট বা থার্ড এস্টেট বলতে কি বোঝ

প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব "তৃতীয় এস্টেট বা থার্ড এস্টেট বলতে কি বোঝ" -এই প্রশ্নটি।

তৃতীয় এস্টেট বা থার্ড এস্টেট -

ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যাজক এবং অভিজাত সম্প্রদায় ছাড়া দেশের বাকি জনসংখ্যার শতকরা ৯৭ জন ছিল তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ। তৃতীয় সম্প্রদায় বা থার্ড এস্টেট-এর মানুষেরা দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সকল ধরণের সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। তৃতীয় এস্টেট-এর মানুষদের কোন অবিভক্ত সামাজিক শ্রেণি ছিল না। বিভিন্ন ধরণের মানুষ ছিল এই তৃতীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। সমাজে বুর্জোয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছিলেন বিত্তশালী শ্রেণির, কিন্তু বুর্জোয়াদের বিত্তের মধ্যে তারতম্য ছিল।  অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে অধ্যাপক লাব্রুস বুর্জোয়া শ্রেণিকে নানা গোষ্ঠীতে বিভক্ত করেছেন যেমন, আইনজীবী, চিকিৎসক, শিল্পপতি, মূলধনী কারবারে যুক্ত বুর্জোয়া, অধ্যাপক,  কারিগর, দোকানদার, ব্যবসায়ী। বুর্জোয়া শ্রেণি বিদ্যা, বুদ্ধি ও ধনবলে সামগ্রিকভাবে অভিজাতদের থেকে বলীয়ান ছিল, কিন্তু বংশকৌলীন্যের অভাবে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে অপাংক্তেয় ছিল। তাই বুর্জোয়াদের দাবি ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে সকলকে সামাজিক স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদান করা হোক, বংশকৌলীন্যের ভিত্তিতে নয়। সামাজিক জীবনে বুর্জোয়াদের এই অহমিকাবোধ পরবর্তীকালে বুর্জোয়া বিপ্লবকে ইন্ধন যোগাতে সক্ষম হয়েছিল।

তৃতীয় এস্টেট বা থার্ড এস্টেট-এর মধ্যে কৃষক ও সাধারণ শ্রমিকরাও ছিলেন। ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষ। কৃষকরা ছিল সাধারণত স্বাধীন কৃষক, ক্ষেত মজুর, ভাগচাষী, খাজনা চাষি, ভুমিদাস ইত্যাদি নানা ভাগে বিভক্ত। সমাজে কৃষক ও শ্রমিক সম্প্রদায়ের মানুষদের আর্থিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। উচ্চ শ্রেণির মানুষদের দ্বারা কৃষকদের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকরাও নানা ভাবে শোষিত ও নির্যাতিত হত, তাদের কোন সুযোগ-সুবিধা ছিল না। এই সব মানুষদের মধ্যে যারা শহুরে খেটে খাওয়া জনতা ছিল তাদের সাঁকুলোৎ বলে অভিহিত করা হত। ফরাসি বিপ্লবের সময় সাঁকুলোৎ শ্রেণির বিশেষ ভূমিকা ছিল। সাঁকুলোৎরা আবার নানা ভাগে বিভক্ত ছিল যেমন - দিনমজুর, মুটে, ছোট দোকানদার, কাঠুরে, রাজমিস্ত্রি মালি, কারিগর প্রভৃতি। ফরাসি সমাজে তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত এইসব মানুষদের নিচু জাত বলে ধরা হত।

Post a Comment

Previous Post Next Post