স্পেনের গৃহযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো

প্রিয় নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব "স্পেনের গৃহযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো" / "স্পেনের গৃহযুদ্ধের কারণ ও গুরুত্ব লেখ" -এই প্রশ্নটি। 

স্পেনের গৃহযুদ্ধের কারণ ও ফলাফল  / গুরুত্ব -
কারণ -

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর স্পেনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সামরিক শাসক প্রাইমো-ডি-রিভেরো স্পেনে একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করলে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্পেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। নিন্মে স্পেনে গৃহযুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করা হল -

পপুলার ফ্রন্ট গঠন ঃ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে পপুলার ফ্রন্ট নামে জোট সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু দক্ষিণপন্থীরা এই সরকারের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাতে শুরু করে।

সামরিক বিক্ষোভের ক্ষোভ ঃ দেশে বিশৃঙ্খলা চলাকালীন সরকার বেশ কিছু সামরিক কর্মচারীকে বরখাস্ত, বদলি এবং অবসর গ্রহণে বাধ্য করে। সামরিক কর্মচারী জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো-কে সরকার ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে নির্বাসনে পাঠালে সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক বিভাগে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

বিদ্রোহ ঃ বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী দল, জমিদার, বুর্জোয়া, যাজকরা ক্ষুব্ধ সামরিক বাহিনীকে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সমর্থন করেছিল। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মরক্কোয় অবস্থানকারী স্পেনীয় সেনাদল বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে জেনারেল ফ্রাঙ্কো নির্বাসন ত্যাগ করে মরক্কোয় উপস্থিত হয়েছিলেন।

গৃহযুদ্ধ শুরু ঃ এই বিদ্রোহে স্পেন সরকারের বিরুদ্ধে প্রজাতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রী এবং কমিউনিস্টরা সরকারকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু ফ্যালানজিস্ট, কার্লিস্ট, ন্যাশনালিস্ট ইত্যাদি দক্ষিণপন্থী দল এবং দেশের শিল্পপতি, ভূস্বামী, যাজকরা জেনারেল ফ্রাঙ্কোকে সমর্থন করেছিল। এরফলে স্পেনে এই দুই পক্ষের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলেছিল।


আরও পড়ুন ঃ



স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলাফল / গুরুত্ব -

স্পেনে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বাধীন পক্ষ এবং প্রজাতন্ত্রী সরকারের মধ্যে চলা দীর্ঘকালীন গৃহযুদ্ধে ফ্রাঙ্কোর দল স্পেনের শাসনক্ষমতা দখল করে। এরফলে দেশে পুনরায় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নিন্মে স্পেনের গৃহযুদ্ধের গুরুত্ব বা ফলাফল আলোচনা করা হল -

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া ঃ স্পেনের গৃহযুদ্ধে অংশ নিয়ে জার্মানির নাৎসি নেতা হিটলার আসন্ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে তাঁর অস্ত্রশস্ত্র ও বিমানবাহিনীর শক্তি পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাই স্পেনের গৃহ যুদ্ধকে 'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহড়া' বলা হয়।

একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ঃ বিদ্রোহী নেতা জেনারেল ফ্রাঙ্কো স্পেনের গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করে স্পেনে একনায়কতান্ত্রিক সরকারের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

ইতালি ও জার্মানির প্রভাব বৃদ্ধি ঃস্পেনের একনায়কতান্ত্রিক সরকারের প্রধান ফ্রাঙ্কো জার্মানির একনায়ক হিটলার এবং ইতালির একনায়ক মুসোলিনির পক্ষ গ্রহণ করেন। ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হিটলার এবং মুসোলিনি তথা জার্মানি ও ইতালি শক্তিজোট আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির কূটনৈতিক পরাজয় ঃস্পেনের গৃহযুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে ইঙ্গ-ফরাসি শক্তিজোটের কূটনৈতিক পরাজয় ঘটেছিল। কারণ জার্মানি এবং ইতালির এই যুদ্ধে অংশগ্রহণের ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল।

হিটলারের আগ্রাসন ঃ স্পেনের গৃহযুদ্ধ থেকে হিটলার বুঝতে পারেন যে, ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি আপাতত তাঁর বিরুদ্ধে যাবে না। তাই তিনি চেকোস্লোভাকিয়া এবং পোল্যান্ড দখলের সাহস দেখিয়েছিলেন। যার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটেছিল।

জাতিসংঘের ব্যর্থতা ঃ স্পেনের গৃহযুদ্ধে জাতিসংঘের নীরব দর্শকের ভূমিকা বিশ্বে জাতিসংঘের ব্যর্থতাকে প্রকট করে তুলেছিল।

মূল্যায়ন ঃ স্পেনের গৃহযুদ্ধে হিটলারের যথেষ্ট লাভ হয়েছিল, কারণ এর ফলে তিনি জার্মানির অস্ত্রশক্তি এবং বিমানশক্তির সুযোগ পেয়েছিলেন। এইযুদ্ধে জার্মানি ও ইতালির যোগদানের ফলে বিশ্বে ইতালি-জার্মানি জোটের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় কিন্তু নিরপেক্ষ ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির কূটনৈতিক পরাজয় ঘটে।

Post a Comment

Previous Post Next Post