ইতিহাস চর্চা -
ইতিহাস বলতে বোঝায় মানুষের কাহিনী, মানুষের এগিয়ে চলার কাহিনী, মানুষের জয়যাত্রার কাহিনী এবং ঐতিহাসিকরা এই কাহিনীর ব্যাখ্যা এবং গবেষণা করে থাকেন। একটি ঘটনাকেই বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন নজরে দেখে যে তুলনামূলক আলোচনা বা চর্চা করেন তাকেই ইতিহাস চর্চা (Historiography) বলা হয়। ইতিহাস চর্চা মূলত দুটি দিক নিয়ে গড়ে ওঠে। একটি হল ইতিহাসের বিষয়বস্তু এবং অপরটি হল লিখনপদ্ধতি বা রচনাশৈলী। নিন্মে এই দুটি দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
ইতিহাসের বিষয়বস্তু ঃ প্রাচীনকাল থেকেই রাজাদের কাহিনী, রাজাদের সিংহাসন লাভ, রাজ্যজয়, সন্ধি, যুদ্ধ ইত্যাদি নিয়েই ইতিহাস রচনা করা হত। এরপর ইউরোপের নবজাগরণ এবং যুক্তিবাদী মানসিকতা ইতিহাস চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, ইতিহাস চিন্তা এবং বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের কথা, সমাজের কথা, খেলাধুলা, শিক্ষা, বিনোদন, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, যোগাযোগ, সভ্যতা-সংস্কৃতি, আর্থিক অবস্থার কথা ইতিহাসের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে। এতকাল ইতিহাসের প্রধান উপাদান ছিল ধর্ম। কিন্তু বর্তমানে ইতিহাস ধর্মীয় বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সামাজিক উপাদানের ঘাতপ্রতিঘাতের ব্যাখ্যা হয়ে উঠেছে।
লিখনপদ্ধতি বা রচনাশৈলী ঃ ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে ইতিহাসের বিষয়বস্তু কিভাবে লেখা হবে তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রশ্নের উত্তরে ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। যেমন -
জার্মান ঐতিহাসিক লিওপোল্ড ভন র্যাংকের মতে ইতিহাসের বিষয়বস্তু হবে বস্তুভিত্তিক। তাঁরা ইতিহাসকে বিজ্ঞান বলে দাবি করেছেন। এই মতের সমর্থক বিউরি বলেছেন, ইতিহাস হল বিজ্ঞান। বার্কলেও ইতিহাস ও বিজ্ঞানকে একই বিষয় বলে দাবি করেছেন।
কিন্তু অন্যদল বলেছেন, ইতিহাসের বিষয়বস্তু লেখা হবে তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে। লর্ড অ্যাকটন -এর মতে তথ্যের বিশ্লেষণ না করলে ইতিহাস লেখার কোন মূল্য নেই। কারও মতে আবার বিজ্ঞানের সূত্র অনুকরণে ইতিহাসের সূত্র ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
মূল্যায়ন ঃ উপরিউক্ত ইতিহাস চর্চার দিক দুটি দিকই হল বর্তমানের নিরিখে। আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সমাজের যে পরিবর্তন ঘটে তা বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করেন। ফলে ইতিহাস চর্চার নানা বৈচিত্র এবং প্রকারভেদ সৃষ্টি হয়।