সরলাদেবী চৌধুরানীর জীবনের ঝরাপাতা থেকে আমরা কোন ঐতিহাসিক তথ্য পেতে পারি

সরলাদেবী চৌধুরানীর "জীবনের ঝরাপাতা" থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্য -

সরলাদেবী চৌধুরানীর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটি হলো "জীবনের ঝরাপাতা"। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠা ভগিনী স্বর্ণকুমারী দেবীর মেয়ে ছিলেন সরলাদেবী চৌধুরানী। জীবনের ঝরাপাতার গল্পটি সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ২৪ কার্তিক, ১৩৫১ বঙ্গাব্দ সংখ্যা থেকে ২৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে এই গ্রন্থটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। 'জীবনের ঝরাপাতা' থেকে সমকালীন ভারতীয় ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। যেমন -

ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল ঃ 'জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থটি থেকে সরলাদেবী চৌধুরানী তথা ঠাকুর পরিবারের শিশুদের ছোটবেলা ও তাদের শিক্ষালাভ সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়। তাছাড়া ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের বিভিন্ন বিষয় যেমন - নারী ও পুরুষদের অবস্থা, ভৃত্যদের কাজকর্ম, উৎসব, অনুষ্ঠান অতিথি আপ্যায়ন ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এই গ্রন্থে রয়েছে।

স্বাদেশিকতা ঃ সরলাদেবী চৌধুরানী স্বদেশী দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহারের প্রচার করার জন্য 'লক্ষীর ভান্ডার' নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেছিলেন। তিনি ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনের সময় 'নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলন'-এর আহ্বান করেছিলেন। এই সম্মেলনের উদ্যোগে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্ত্রী মহামন্ডল প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীদের অবস্থার উন্নয়নের জন্য তিনি আন্তরিকভাবে সচেষ্ট ছিলেন। 

সরলাদেবীর বৈপ্লবিক কর্মকান্ড ঃ 'জীবনের ঝরাপাতা' থেকে সমকালীন সময়ের সশস্ত্র বিপ্লবের কথা ও সরলাদেবীর বৈপ্লবিক কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। সরলাদেবী বাঙালিদের মধ্যে বীরত্বের সঞ্চার ঘটানোর উদ্দেশ্যে বিরাষ্টমী ব্রত ও প্রতাপাদিত্য উৎসবের প্রচলন করেছিলেন। স্বদেশী আন্দোলনের যুগে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য অন্যতম প্রেরণাদাত্রী ছিলেন সরলাদেবী চৌধুরানী। 

ব্যক্তিগত জীবন ঃ 'জীবনের ঝরাপাতা' থেকে জানা যায় যে, সরলাদেবী স্বামী বিবেকানন্দের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে তিনি কর্মজীবন থেকে অবসর নেন এবং অধ্যাত্মসাধনায় নিমগ্ন হন।

সামাজিক জীবন ও অর্থনৈতিক শোষণ ঃ 'জীবনের ঝরাপাতা' থেকে সমকালীন সমাজের নারীশিক্ষা, নারীদের আচার-আচরণ সহ সমাজের বিভিন্ন আদব কায়দা ও ব্রাহ্মসমাজের কার্যকলাপের কথা জানা যায়। এই গ্রন্থে ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা কৃষক, শ্রমিক, নীলচাষি ও চা বাগানের কুলিদের ওপর যে শোষণ ও অত্যাচার হয়েছিল তার বিবরণও ফুটে উঠেছে।

মূল্যায়ন ঃ 'জীবনের ঝরাপাতা' গ্রন্থটিতে সরলাদেবী চৌধুরানীর নিজের জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি ও উপলব্ধির কথা লেখা আছে। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আধুনিক ইতিহাস চর্চায় এই গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসচর্চার একটি ঐতিহাসিক দলিল।

Post a Comment

Previous Post Next Post