ইতিহাসের উপাদান হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী জীবনস্মৃতি-র গুরুত্ব -
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা স্মৃতিকথামূলক একটি গ্রন্থ হল 'জীবনস্মৃতি'। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনোই জীবনের ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্যে 'জীবনস্মৃতি' রচনা করেননি। তিনি বলতে চেয়েছেন এটি তথ্যসমৃদ্ধ ইতিহাস গ্রন্থের মত নয়, এটি তাঁর স্মৃতি রোমান্থন করে লেখা। তাই বলা যায় আধুনিক ভারতের ইতিহাসে 'জীবনস্মৃতি'-র গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রকাশকাল ও পত্রিকা ঃ ১৩১৯ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। তার আগে এটি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত প্রবাসী পত্রিকায় ভাদ্র, ১৩১৮ বংগাব্দ থেকে শ্রাবণ, ১৩১৯ বংগাব্দ পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি ছিল - 'শিক্ষারম্ভ', 'ঘর ও বাহির', 'ভৃত্য-রাজকতন্ত্র', 'কবিতা রচনারম্ভ', 'স্বাদেশিকতা', বংশতালিকা-সহ ৪৫ টি লেখা। নিন্মে ইতিহাসের উপাদান হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী 'জীবনস্মৃতি'-র গুরুত্ব আলোচনা করা হল -
ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল ঃ 'জীবনস্মৃতি' থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তথা ঠাকুর পরিবারের শিশুদের ছোটবেলা ও তাদের শিক্ষা লাভ, সংগীত চর্চা প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহল -এর বিভিন্ন অবস্থা, নারী-পুরুষের অবস্থা, উৎসব-অনুষ্ঠান, অতিথি আপ্যায়ন প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
বাঙালি সমাজে জাতীয় চেতনার প্রসার ঃ 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থ থেকে বাঙালি সমাজের জাতীয় চেতনার প্রসারের কথা জানা যায়। এই সময়ে বাঙালি সমাজে স্বদেশী ভাবধারার প্রসার ঘটে। এই সময় বাঙালিরা একদিকে যেমন পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করছে অন্যদিকে তেমনই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিও অনুরাগ দেখায়।
বাঙালির স্বাদেশিকতা ঃ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ও রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বাদেশিকতার বিভিন্ন সভা সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য এই গ্রন্থে রয়েছে। নবগোপাল মিত্রের হিন্দু মেলা ও স্বদেশী কাপড়, স্বদেশী দেশলাই ইত্যাদি সম্পর্কে এবং যুব সমাজের উদ্যোগ বিষয়ে বিভিন্ন কথা লিপিবদ্ধ করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক যোগ ঃ জীবনস্মৃতি গ্রন্থে লেখক সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনার বিবরণ দেননি। প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের দেশাত্মবোধক কর্মসূচিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অংশ নিয়েছেন, যা তাঁর আত্মজীবনী থেকে জানা যায়।
মূল্যায়ন ঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, "এই স্মৃতির ভান্ডারে অত্যন্ত যথাযথ রূপে ইতিহাস সংগ্রহের চেষ্টা ব্যর্থ হইতে পারে"। এই গ্রন্থ থেকে ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহের বিষয়ে লেখক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাও বলা যায়, আধুনিক ইতিহাস চর্চায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী 'জীবনস্মৃতি'-র গুরুত্ব অপরিসীম।