আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে সোমপ্রকাশ পত্রিকার গুরুত্ব -
আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত সোমপ্রকাশ পত্রিকা থেকে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
সোমপ্রকাশ পত্রিকার প্রথম প্রকাশ ও সম্পাদক ঃ 'সোমপ্রকাশ' পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে। পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন কলকাতা সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। সমকালীন ইতিহাসের নানান তথ্য জানার জন্য 'সোমপ্রকাশ' পত্রিকার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।
সমকালীন তথ্য ঃ এই পত্রিকা থেকে সমকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, ধর্ম, বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলন ইত্যাদি নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যায়। এই পত্রিকার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও শোষণ রূপ সম্পর্কে সাধারণ ভারতীয়রা অবগত হয়।
বাঙালির সমাজ সংস্কার ঃ সমকালীন বাঙালি সমাজের সংস্কার আন্দোলনে 'সোমপ্রকাশ' পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই পত্রিকা বাঙালি সমাজে প্রচলিত বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, পণপ্রথা প্রভৃতি বিষয়ের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ লেখা, প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশ করত। তৎকালীন সমাজে বিধবাবিবাহের প্রসারে সোমপ্রকাশের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ঃ ব্রিটিশ সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের আন্দোলনের খবর 'সোমপ্রকাশ' পত্রিকা গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করত। এই পত্রিকা থেকে দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইনবিরোধী, ইলবার্ট বিলের মত ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের বিভিন্ন আন্দোলন সম্পর্কে জানান দিত।
দেশীয় ভাষার সংবাদপত্রের অবস্থা ঃ এই পত্রিকা থেকে তৎকালীন সময়ে প্রকাশিত দেশীয় ভাষার সংবাদপত্র সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। 'সোমপ্রকাশ' পত্রিকা ছিল দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত একটি নির্ভীক সাপ্তাহিক পত্রিকা, যা ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করেছে। এই জন্য এই পত্রিকাটির ওপর ব্রিটিশ সরকারের সংবাদপত্র আইনের কোপ পড়ে। পত্রিকার সম্পাদককে জরিমানা দিতে বলা হলে সম্পাদক তা দিতে অস্বীকার করে। ফলে পত্রিকাটি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়।