আধুনিক ইতিহাস চর্চায় পরিবেশের ইতিহাস -
সাম্প্রতিক ইতিহাস চর্চার ধারায় পরিবেশের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। পরিবেশ সংক্রান্ত ইতিহাস চর্চা প্রথম উত্তর আমেরিকায় হয়। তারপর তা ইউরোপের শুরু হয়েছিল। ১৯৬০ -এর দশকে পরিবেশকে কেন্দ্র করে যে গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই পরিবেশের ইতিহাসের চর্চা শুরু হয়। তবে প্রথম দিকে বিজ্ঞান গবেষকরা এই বিষয়টিকে শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন।
মার্কিন পরিবেশবিদ র্যাচেল কারসন ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে 'দ্য সি অ্যারাউন্ড আস' নামক গ্রন্থটি রচনা করেন। যেটি ছিল পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও কলকারখানার বজ্র পদার্থ পরিবেশ দূষণ করে। কারসন ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে 'সাইলেন্ট স্প্রিং' নামে আরও একটি গ্রন্থ রচনা করেন যাতে তিনি দেখিয়েছেন মশা-মাছি মারার জন্য ব্যবহৃত করা কীটনাশক গুলি যেমন - ডিডিটি ইত্যাদি ব্যবহার করলে পাখিদের ভয়ংকর ক্ষতি হয়।
ভারতে পরিবেশের ইতিহাস চর্চা শুরু হয়েছিল ১৯৭০ -এর দশকে। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এডুকেশন। রামচন্দ্র গুহ তাঁর অশান্ত অরণ্য জীবন গ্রন্থে উপজাতীয় কৃষক জীবনের এক বিশেষ দিকের প্রতি আলোকপাত করেছেন। এলিজাবেথ হুইটকম্ব উত্তর ভারতের কৃষি ব্যবস্থার উপর গবেষণা করে দেখান যে, সেচব্যবস্থার প্রবর্তন সিন্ধু ও গাঙ্গেয় উপত্যকা অঞ্চলে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল।
ভারতের পরিবেশ সচেতনতা ঃ সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকার যখন উপজাতিদের প্রথাগত বনজ সম্পদ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরকারি বিধিনিষেধ জারি করে, তখন তারা তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র রসদ হারানোর ভয় ভীত হয়েছেন। এছাড়া বনকে কেন্দ্র করে যে উপজাতি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে তা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাস জানতে হলে, ঐতিহাসিককে উপজাতি শোষণের ইতিহাসকেও সমভাবে জানতে হবে। আধুনিক ভারতে কর্ণাটকে আপ্পিকো আন্দোলন, দাক্ষিণাত্যে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, উত্তরাখণ্ডে চিপকো আন্দোলন -এর ইতিহাস আমরা পরিবেশ সচেতনতার পাঠ গ্রহণ করতে পারি।
গুরুত্ব ঃ পরিবেশের ইতিহাসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল -
(i) পরিবেশের ইতিহাস ভূগোলের ও জীববিদ্যার শিক্ষা দেয়। বিভিন্ন অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে জানতে হলে পরিবেশের ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
(ii) পরিবেশ সংকটের কারণ ও সমাধান সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে পরিবেশের ইতিহাস।
(iii) সেচ ব্যবস্থা অর্থাৎ জলাধার, নদীবাঁধ, খাল-খনন পরিবেশের উপর কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সে বিষয়ে ধারণা লাভ করা যায় পরিবেশের ইতিহাসের মাধ্যমে।
(iv) পরিবেশের সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে পরিবেশের ইতিহাস সাহায্য করে।