প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব "গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় সমকালীন বাংলার কিরূপ সমাজচিত্র ফুটে উঠেছে / "গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলার কি ধরণের সমাজচিত্র পাওয়া যায়" / - এই প্রশ্নটি।
গ্রামবার্তা প্রকাশিকা'য় উনিশ শতকের বাংলার সমাজ চিত্র -
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে 'গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার। কাঙ্গাল হরিনাথ নামেও তিনি সুপরিচিত ছিলেন। এই পত্রিকা প্রথমে মাসিক এবং পরে পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা থেকে সমকালীন সমাজের বহু তথ্য জানা যায়। যেমন -
সমাজে নারীদের অবস্থা ও শিক্ষার প্রসার ঃ গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের সমাজের নারীদের দুরবস্থার কথা জানা যায়। তৎকালীন সমাজে এক শ্রেণীর প্রগতিশীল মানুষ নারী শিক্ষার প্রসারে সচেষ্ট ছিলেন। এছাড়া এই পত্রিকার শিক্ষার প্রসার, বিশেষত নারী শিক্ষা প্রসারের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়েছিল।
জমিদারি শোষণ ঃ এই পত্রিকা গ্রাম্য প্রজাদের উপর জমিদারী শোষণের কথা প্রচার করেছিল। তখন বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তো চালু ছিল। জমির উপর প্রজার স্বত্ব বা অধিকার ছিল না। চড়া রাজস্ব, অতিরিক্ত কর, কারণে-অকারণে জমি থেকে প্রজাদের উচ্ছেদ করা হতো। সেই সময়কার অভাগা চাষীদের দুর্দশার কাহিনী এই পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো।
সুদখোর মহাজনদের শোষণ ঃ গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা থেকে তৎকালীন সমাজে সুদখোর মহজনদের রমরমার কথা জানা যায়। তারা চড়া সুদের বিনিময়ে সাধারণ কৃষকদের টাকা ধার দিত। গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল।
নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ঃ গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় সমাজের নীলকর সাহেবদের কর্মকান্ড জনিত আতঙ্কের চিত্র ধরা পড়ে। নীলকর সাহেবরা অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য চাষীদের জোর করে নীল চাষ করাতো। উৎপাদিত নীল তারা চাষীদের কাছ থেকে অল্প দামে কিনে নিতো। নীলকর সাহেবদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে চাষীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। প্রতিরোধের কথা এই পত্রিকাটি তুলে ধরেছিল।
মূল্যায়ন ঃ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলার সমাজ চিত্রের পাশাপাশি আরো অনেক বিষয় নিয়ে এই পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি হত। ডাকঘরে মানি অর্ডার ব্যবস্থা প্রচলনের কথা, লালন ফকিরের গান প্রভৃতি এই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হতো। এই পত্রিকাটি ছিল সুলভ মূল্যের। অত্যন্ত দারিদ্রতার মধ্যেও সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার এই পত্রিকা প্রকাশিকার কাজ চালিয়ে যান।