ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা কিরূপ ছিল

ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা -

ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শুরু হলেও তারা প্রথম দিকে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে খুব বেশি উৎসাহ দেখায়নি। এ সময় মূলত খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারের উদ্দেশ্যে আগত মিশননারীদের উদ্যোগেই ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ ঘটেছিল। 

চার্লস গ্রান্টের প্রস্তাব ঃ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী চার্লস গ্রান্ট ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে  'অবজারভেশন' নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলেন। এই পুস্তিকায় তিনি ভারতে সুসংবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু কোম্পানি তা অগ্রাহ্য করে।

মিশরনারিদের অবদান ঃ এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগগুলি ছিল নিম্নরূপ - 

     (i) ব্যাপটিস্ট মিশন ঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে মার্শম্যান, উইলিয়াম কেরি ও উইলিয়াম ওয়াড 'ব্যাপ্টিস্ট মিশন' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য তারা শ্রীরামপুরে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ২৬ টি আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল রচনা করেছিলেন। তারা দিগদর্শন ও সমাচার দর্পণ পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর বিদ্যালয় এবং শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

     (ii) লন্ডন মিশনারি সোসাইটি ঃ খ্রিস্টান মিশনারিরা কলকাতা ও বাংলার বিভিন্ন জেলায় বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার মধ্যে চুঁচুড়া, কালনা, বর্ধমান, বহরমপুর, মালদা প্রভৃতি স্থানে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় গুলি ছিল উল্লেখযোগ্য। 

     (iii) স্কটিশ মিশন ঃ আলেকজান্ডার ডাফ -এর স্কটিশ মিশন বাংলায় কয়েকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এগুলি ডাফ স্কুল নামে পরিচিত ছিল। এর মধ্যে কলকাতা জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি, মিস কুক, মেরি কার্পেন্টার প্রমুখের উদ্যোগে বাংলা তথা ভারতে নারীশিক্ষার বিকাশ ঘটেছিল।

মূল্যায়ন ঃ কোনরকম সরকারি সাহায্য ছাড়াই মিশনারিরা নিজেদের উদ্যোগে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন। তাদের প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় গুলিতে খ্রিস্টধর্ম সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি পড়ানো হতো ইতিহাস, ভূগোল, ব্যাকরণ প্রভৃতি বিষয়ে। এর ফলে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে এদেশের মানুষেরা জানতে পারে এবং পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিস্তার ঘটে।


আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post