স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো / মানবসেবার আদর্শ সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারা ব্যাখ্যা করো / স্বামীজির 'নব্য বেদান্ত' ব্যাখ্যা করো -

শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি পরে স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বিবেকানন্দ গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের শিবজ্ঞানে জীবসেবা এবং যত মত তত পথ - এই বাণীর দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। গুরুর এই বাণী ও হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচারের জন্য ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগদান করেন। তাঁর চেষ্টায় হিন্দু ধর্মের খ্যাতি বাংলার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে এবং গড়ে ওঠে নব্য বেদান্তবাদ। 

বিবেকানন্দের ধর্মীয় আদর্শ ঃ রাজা রামমোহন রায়, দয়ানন্দ সরস্বতীর মতো স্বামী বিবেকানন্দও সনাতন হিন্দু ধর্মের অতীত গরিমায় আপ্লুত ছিলেন। বৈদান্তিক হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থান তাঁর কাম্য ছিল।  পাশাপাশি তিনি পরধর্মসহিষ্ণুতাও দেখিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের রজ ও তম গুণের সমন্বয়ে এক নতুন ভারতে জেগে উঠুক।

নব্য বেদান্ত ঃ আধুনিক বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার গুলি ছিল বেদান্তের প্রতিধ্বনি মাত্র। বেদান্ত জ্ঞান, মূর্তিপূজা, পৌরাণিক কাহিনী, বৌদ্ধ অজ্ঞেয়বাদ, জৈন নিরীশ্বরবাদ সবই হিন্দুধর্মে আছে। অন্য ধর্মে কতকগুলি নিয়ম স্থির করে সকলকে মেনে চলতে বলা হয় বা বাধ্য করা হয়। হিন্দু ধর্মে সাপেক্ষকে আশ্রয় করে নিরপেক্ষ তত্ত্বের ধারণা প্রকাশ করা সম্ভব। বিবেকানন্দ জীবদেহ, আত্মা ও পরমাত্মার সম্বন্ধ ব্যাখ্যা করেন। তাঁর মতে, আত্মা কোন পদার্থ থেকে সৃষ্টি নয়। বেদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, দেহ নষ্ট হলেও আত্মা নষ্ট হয় না। আত্মা জড় নিয়মে চলে না। আত্মা হলো নিত্য-শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্তস্বভাব, অনাদি, অমর ও পূর্ণ। আত্মা ব্রহ্মস্বরূপ, তা পঞ্চভূতে আবদ্ধ থাকে। হিন্দুদের অদ্বৈতবাদই ধর্মবিজ্ঞানের চরম সিদ্ধান্ত, মূল শক্তি। অর্থাৎ যে শক্তি থেকে অন্যান্য শক্তির সৃষ্টি হয়েছে, তা আবিষ্কার করাই বিজ্ঞানের লক্ষ্য। অদ্বৈতবাদ পরিবর্তনশীল জগতের কারণ। আত্মা, পরমাত্মা, বহুঈশ্বরবাদ ও দ্বৈতবাদ থেকে অদ্বৈতবাদে পৌঁছাতে হয়।

মানব সেবার আদর্শ ঃ এই ধর্মীয় ব্যাখ্যার সঙ্গে বিবেকানন্দ মানবসেবার আদর্শ যোগ করেছিলেন। তিনি বলেন, বনের বেদান্তকে ঘরে আনতে হবে। জীবনের সঙ্গে বেদান্তকে মেলাতে হবে। জনসেবার আদর্শ ও কর্মযোগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্য তিনি পাশ্চাত্যের কর্মযোগ, আত্মবিশ্বাস, অধ্যবসায়, উদ্যম ও নিষ্ঠাকে গ্রহণ ও তার সঙ্গে ভারতের অধ্যাত্মবাদ ও মানবতাকে যুক্ত করতে বলেছিলেন। সমষ্টির মুক্তি ছাড়া ব্যক্তির মুক্তি সম্ভব নয় - এই হল বিবেকানন্দের নব্য বেদান্তবাদ। 

মূল্যায়ন ঃ কন্যাকুমারীর শিলাখণ্ডে বসে তিনি চিন্তা করেছিলেন, ব্যক্তিগত মোক্ষ লাভের চেয়ে ভারতবাসীর সেবাই চরম লক্ষ্য হওয়া উচিত। তিনি বলেন, "Motion is the sign of life". তাই তাঁর এই নব্য বেদান্তবাদ ছিল বাস্তব পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী যথাযথ। গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শ অনুসরণ করে স্বামী বিবেকানন্দ শিবজ্ঞানে জীবসেবার জন্য ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post