শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ সম্পর্কে আলোচনা করো

শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ -

খ্রিস্টান মিশনারিদের আক্রমণে যখন হিন্দু সমাজ আক্রান্ত, যখন দলে দলে ইংরেজি শিক্ষিত যুবকেরা  হিন্দু ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে খ্রিস্ট ধর্ম বা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি আন্তরিকতা দেখাচ্ছে সেই সংকটময় পরিস্থিতিতে আবির্ভূত হন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। দক্ষিণেশ্বরের কালিসাধক এই পুরোহিত বিভিন্ন ধর্ম ও সাধন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে সর্বধর্মসমন্বয় -এর মহান আদর্শ তুলে ধরেছিলেন।

সর্বধর্ম অনুশীলন ঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কালীসাধনা বিভিন্ন ধর্মের সাধনপদ্ধতি অনুশীলন করেছিলেন। যেমন - 

  • তান্ত্রিক ঃ তিনি এক ভৈরবীর কাছে তন্ত্র সাধনা করেছিলেন। 
  • বৈষ্ণব ঃ তিনি জটাধারী নামে রামাইত সাধুর কাছে বৈষ্ণব ধর্মচর্চা করেছিলেন। 
  • বৈদিক মার্গ ঃ তিনি আচার্য তোতাপুরির কাছে কাছে বৈদিক মার্গ অনুশীলন করেছিলেন। এরফলে তিনি সমাধি লাভের পথ খুঁজে পান।
  • ইসলাম ঃ তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত গোবিন্দ রায়ের কাছ থেকে ইসলাম ধর্মসাধনা শেখেন। সন্ধ্যায় নামাজ পড়েন এবং আল্লাহমন্ত্র জপ করেন। 
  • খ্রিস্ট ঃ তিনি শম্ভুচরণ মল্লিকের কাছ থেকে যীশু খ্রীষ্টের জীবনী ও ধর্মমত সম্বন্ধে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। 
  • বুদ্ধ ঃ তিনি বুদ্ধদেবকে ঈশ্বরের অবতার বলে শ্রদ্ধা ও পূজা করতেন। তিনি বলতেন যে বৌদ্ধমতে ও বৈদিক জ্ঞানমার্গে কোন পার্থক্য নেই।
  • জৈন ঃ তিনি জৈন তীর্থঙ্করদের এবং বিশেষ করে মহাবীরকে শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর ঘরে বিভিন্ন দেবদেবীর সঙ্গে যীশু ও মহাবীরের একটি পাথরের মূর্তি থাকতো। তিনি এই ছবি ও মূর্তির সামনে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ধূপধুনো দিতেন। 

সমন্বয় ঃ এইভাবে তিনি বিভিন্ন ধর্ম সম্বন্ধে পরিচিত হন এবং তাদের সাধারণ পদ্ধতি ও ফল বুঝতে পারেন। এরপর তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে, সব ধর্মই সত্য  -অর্থাৎ যত মত তত পথ। 

আদর্শ ঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের বাণীর মূল কথা হলো শিবজ্ঞানে জীবসেবা। এজন্য সংসার ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর দেবালয় থাকেন না, থাকেন জীবের মধ্যে। জীব সেবায় হল ঈশ্বরের সেবা।

গুরুত্ব ঃ রামকৃষ্ণের উদার মতাদর্শ সনাতন হিন্দু ধর্মকে জাতপাতের বিভেদ সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম যেমন প্রাণশক্তি ফিরে পায় তেমনই অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায়, বৈরিতা কমে যায় এবং সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ প্রচারিত হয়।

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post