নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ -
হিন্দু কলেজের শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর অনুগামীদের সাধারণত নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী নামে অভিহিত করা হয়। তৎকালীন সমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী একটি আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। নিম্নে নব্যবঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি আলোচনা করা হলো -
উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব ঃ ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ডিরোজিওর মৃত্যুর পর উপযুক্ত নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতার অভাব নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর সদস্যরা অনুভব করে। এই কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া তারা নিজেদের কাজকর্মে যুক্ত হয়ে পড়লে আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যায়।
উপযুক্ত কর্মসূচির অভাব ঃ সমাজের বৃহত্তর অংশকে প্রভাবিত করার মত কর্মসূচি নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর কখনোই ছিল না। অতি উচ্ছ্বাস এবং তীব্র বিরোধিতা হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভ ও আতঙ্কের জন্ম দেয়। সমাজের প্রগতিশীল অংশ কখনোই তাদের কর্মসূচিতে বিশেষ আকৃষ্ট হয়নি।
শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন ঃ নব্যবঙ্গ গোষ্ঠীর আন্দোলন ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। তারা ইংরেজি শিক্ষিত শহুরে তরুণদের মধ্যেই তাদের আন্দোলনের ঢেউ আনতে পেরেছিল কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আন্দোলনের কোন প্রভাব পড়েনি।
হিন্দুদের প্রতি অন্ধ বিরোধিতা প্রদর্শন ঃ নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী হিন্দু ধর্মের কুসংস্কারের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। কুসংস্কারের পাশাপাশি তারা হিন্দু ধর্মের সমস্ত আচার-আচরণের তীব্র বিরোধিতা শুরু করে। অন্ধভাবে হিন্দুদের প্রতি বিরোধিতা করলে হিন্দু সমাজে তাদের কোন গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়নি। ফলে নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
কৃষকদের প্রতি উদাসীনতা ঃ নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক শ্রেণীর সমস্যার বিষয়ে উদাসীন ছিল। ফলে কৃষক শ্রেণীর এই আন্দোলন সম্পর্কে কোন আগ্রহ ছিল না।
উপরোক্ত কারণগুলির জন্য নব্যবঙ্গ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
আরও পড়ুন ঃ