উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য গুলি -
উনিশ শতকে বাংলায় নবজাগরণ ঘটার কারণ ছিল বাংলাতেই প্রথম ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলার কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজধানী ও পাশ্চাত্য শিক্ষার কেন্দ্র। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য গুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো -
উচ্চশ্রেণীর জাগরণ ঃ বাংলার নবজাগরণ মূলত পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ও সমাজের তথাকথিত উচ্চশ্রেণীর মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই সম্প্রদায়কে মধ্যবিত্ত ভদ্রলোক বলা হয়। এই কারণে অধ্যাপক অনিল শীল উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণকে এলিটিস্ট আন্দোলন বলেছেন।
শহরকেন্দ্রিক জাগরণ ঃ উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক, বিশেষ করে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে এই নবজাগরণ ঘটেছিল। এতে শহরের ধনী ব্যক্তি ও শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় অংশগ্রহণ করেছিল। এই নবজাগরণের সঙ্গে গ্রামের সাধারণ মানুষের কোন সম্পর্ক ছিল না এবং তাদের উপর এর কোন প্রভাব পড়েনি।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ঃ ১৯ শতকের বাংলার নবজাগরণ মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই সময়ের সংস্কার আন্দোলনের প্রচেষ্টা হিন্দু সমাজ ও ধর্মকে অতিক্রম করতে পারেনি। সমাজের একটি বড় অংশের মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও তাদের মধ্যে এই সংস্কারের কোনো প্রভাব পড়েনি।
ব্রিটিশ সরকার নির্ভর জাগরণ ঃ বাংলার নবজাগরণ ছিল ব্রিটিশ শাসন নির্ভর। সমাজ সংস্কারকগণ তাদের সাফল্যের জন্য ব্রিটিশ সরকারের অনুগ্রহ প্রার্থনা করেছিল। তাছাড়া পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে ব্রিটিশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তৎকালীন সময়ের সমাজের উচ্চশ্রেণীর মানুষেরা মনে করতেন, ব্রিটিশ শাসনের ফলেই তাদের মঙ্গল হবে।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, বাংলার নবজাগরণের মাধ্যমে ভারতের মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং আধুনিক যুগের সূচনা হয়।
আরও পড়ুন ঃ