মেহেরগড় সভ্যতার উৎখননের গুরুত্ব আলোচনা করো

মেহেরগড় সভ্যতার উৎখননের গুরুত্ব -

তাম্র-প্রস্তর যুগে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে বোলান গিরিপথের নিকটবর্তী অঞ্চলে এক সুপ্রাচীন গ্রামীণ সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল, যা মেহেরগড় সভ্যতা নামে পরিচিত। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ এবং পাকিস্তানের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান রিচার্ড মিডো বেলুচিস্তানের পশ্চিমে সিন্ধু উপত্যকার কাচ্চি সমভূমিতে মেহেরগড় সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কার করেন। সাতটি পর্যায়ে বিভক্ত এই সভ্যতার মধ্যে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ পশুপালকের জীবন থেকে মানুষের নাগরিকতা উত্তরণের প্রতিটি পদক্ষেপ সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। নিম্নে মেহেরগড় সভ্যতার উৎখননের গুরুত্ব তুলে ধরা হল -

কৃষিকাজ ও পশুপালন ঃ মেহেরগড় সভ্যতার প্রথম পর্যায়ে মানুষ গম ও যব, এই দুই প্রকার খাদ্য শস্যের চাষ করত। খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য স্বতন্ত্র শস্যাগার নির্মাণ করা হত এবং ছাগল, ভেড়া, কুঁজবিশিষ্ট ষাঁড়কে পশুপালনের কাজে ব্যবহার করা হত।

বসতি স্থাপন ঃ মেহেরগড় সভ্যতার মানুষ স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তুলেছিল। তারা রোদে পোড়ানো সমান মাপের ইট বা মাটি দিয়ে বাড়ি তৈরি করত।

হাতিয়ার ও অন্যান্য সামগ্রী ঃ এই সভ্যতার হাতিয়ারগুলি মূলত পাথর দিয়ে তৈরি হত। কৃষি-যন্ত্রপাতির মধ্যে প্রাচীনতম হাতিয়ারটি হল বিটুমেন জাতীয় পাথরখণ্ডে নির্মিত কাস্তে। হাতিয়ার ছাড়া অন্যান্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল মৃৎপাত্র, শিলনোড়া, হামানদিস্তা, জাঁতা প্রভৃতি।

বয়নশিল্প ঃ মেহেরগড় সভ্যতায় প্রাপ্ত কার্পাস তুলোর পোড়া বীজ থেকে প্রমাণ হয় যে, এসময়ের মানুষ 'সুতিবস্ত্রের' সঙ্গে পরিচিত ছিল। এটি ভারতে কার্পাস তুলো চাষের প্রাচীনতম নিদর্শন বলে মনে করা হয়।

মূল্যায়ন ঃ মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কারের পূর্বে সিন্ধু সভ্যতাকে ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা মনে করা হত। কিন্তু মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কারের ফলে সেই বদ্ধমূল ধারণার পরিবর্তন ঘটে। এই কারণে মেহেরগড় সভ্যতার উৎখননের গুরুত্বকে কোনমতেই অস্বীকার করা যায় না।

Post a Comment

Previous Post Next Post