ডিরোজিও ও নব্য বঙ্গ আন্দোলন -
উনিশ শতকের বাংলায় সমাজসংস্কারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তাঁর নেতৃত্বে উনিশ শতকে বাংলায় নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল দল গড়ে উঠেছিল।
নব্যবঙ্গ আন্দোলন ঃ ডিরোজিওর একান্ত অনুগামী ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রামতনু লাহিড়ী, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, প্যারীচাঁদ মিত্র প্রমুখ। এঁরা পাশ্চাত্য শিক্ষা ও যুক্তিবাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে হিন্দুদের প্রচলিত সমস্ত সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি, কুসংস্কারের বিরোধিতা করেছিল। ডিরোজিও ও তাঁর অনুগামীদের এই কার্যকলাপ নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত।
ডিরোজিওর মতাদর্শ ও ভাবধারার প্রসার ঃ একাধারে ছাত্রদের বন্ধু ও পথপ্রদর্শক ডিরোজিও তৎকালীন হিন্দু সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, পৌত্তলিকতা, অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদপ্রথা, ধর্মবিশ্বাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তাঁর অনুগামীরা প্রকাশ্যে ব্রাহ্মণদের উপবীত ছিঁড়ে দিতেন। তাঁরা নিষিদ্ধ মাংস খেতেন। এইভাবে রক্ষণশীল হিন্দু ধর্ম ও সমাজকে আক্রমণ করলে সমাজে তীব্র আলোড়ন ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সংগঠন ও পত্রপত্রিকা প্রকাশ ঃ ডিরোজিও স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিবাদের প্রসার ঘটানোর জন্য ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন স্থাপন করেছিলেন। এছাড়া নব্যবঙ্গীয়রা পার্থেনন, জ্ঞানান্বেষণ, এনকোয়েরার, প্রভৃতি পত্রিকার মাধ্যমে নারীশিক্ষা ও নারী স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি বিষয়ে প্রবন্ধ ছাপাতে থাকেন। ডিরোজিও রচিত ফকির অব জঙ্গিরা এবং To India - Native Land গ্রন্থ দুটিতে তাঁর দেশপ্রেমের পরিচয় স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।
মূল্যায়ন ঃ ডিরোজিও এবং তাঁর নব্যবঙ্গ দলের উগ্র প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় ডিরোজিওকে হিন্দু কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ডিরোজিওর মৃত্যুর পর নব্যবঙ্গ আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়েছিল।
আরও পড়ুন ঃ