বিধবা বিবাহ আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখ

বিধবা বিবাহ আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখ / উনিশ শতকের বাংলায় কিভাবে বিধবা বিবাহ আন্দোলন গড়ে ওঠে -

উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত এক শ্রেণী সমাজের বিভিন্ন প্রথা দূর করতে বিভিন্ন আন্দোলনে লিপ্ত হয়। যার মধ্যে একটি অন্যতম আন্দোলন ছিল বিধবা বিবাহ আন্দোলন। 

প্রাথমিক উদ্যোগ ঃ সতীদাহপ্রথা রদ এবং ব্রাহ্মসমাজে বিধবা বিবাহ চালু হওয়ার ফলে হিন্দু সমাজেও বিধবাবিবাহ চালু করার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে ওঠে।

     ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় আইন কমিশন কলকাতা, মাদ্রাজ ও এলাহাবাদের সদর আদালতের বিচারপতিদের কাছে এই বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে সব বিচারপতিই বাল্যবিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষে মতামত জানান। 

     কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বংশধর রাজা শ্রীশচন্দ্র বিধবা বিবাহকে শাস্ত্রসম্মত ভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। তিনি অনেক স্মৃতিশাস্ত্রকার তথ্য প্রমাণ দিয়েও সমাজের চাপে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন। কলকাতার বউবাজারের নীলকমল বন্দোপাধ্যায়, পটলডাঙ্গার শ্যামাচরণ দাস একই ভাবে চেষ্টা করেন এবং তারাও ব্যর্থ হন।

     ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি বিধবাবিবাহের জন্য সচেষ্ট হয়। কিন্তু তারা আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। 

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আন্দোলন ঃ সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

     ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে সর্বশুভকরী পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় তিনি বাল্যবিবাহের দোষ নামে একটি নিবন্ধ রচনা করেছিলেন। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় বিধবাবিবাহের সমর্থনে একটি প্রবন্ধ লেখেন। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদবিষয়ক প্রস্তাব নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে পুস্তিকাটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। পরাশর সংহিতা থেকে উদ্ধৃতি  দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত। এর ফলে হিন্দু সমাজে একটি আলোড়ন সৃষ্টি হয়। 

     বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহের স্বপক্ষে এক হাজার জন বিশিষ্ট ব্যক্তির স্বাক্ষরযুক্ত একটি আবেদনপত্র ভারত সরকারের কাছে প্রেরণ করেন। বাংলা ও বাংলার বাইরের বিভিন্ন স্থান থেকে অনুরূপ আবেদন পাঠানো হয়। রক্ষণশীলরাও রাধাকান্ত দেব -এর নেতৃত্বে ৩৬৭৬৩ জনের স্বাক্ষর বিশিষ্ট একটি বিরোধিতা পত্র সরকারের কাছে পাঠায়। অবশেষে বড়োলাট লর্ড ক্যানিং শেষ ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই বিধবা বিবাহ আইন পাস করেন। 

ফলাফল ঃ বিধবাবিবাহ আইন পাস হওয়ার পর বাংলায় প্রথম বিধবা বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর। পাত্র ছিলেন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ও পাত্রী ছিলেন দশ বছরের বাল্যবিধবা কালিমতি দেবী। বিদ্যাসাগর নিজ পুত্র নারায়ণচন্দ্রের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামে একজন বিধবার বিবাহ দিয়াছিলেন। এরপর তিনি ৮২ হাজার টাকা খরচ করে ৬০ জন বিধবার বিবাহ দেন।  জনপ্রিয়তা লাভ না করলেও এভাবে হিন্দু সমাজে বিধবাবিবাহ চালু হয়।


আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post