প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে আলোচনা করব "রাজা রামমোহন রায়কে কেন ভারতের 'প্রথম আধুনিক মানুষ' মনে করা হয় ?" - এই প্রশ্নটি।
রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলার কারণ -
উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতের ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের ইতিহাসে রাজা রামমোহন রায় ছিল এক উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষায় যুক্তিবাদের সমন্বয়ে ঘটিয়ে নবভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থনে গৃহীত পদক্ষেপ ঃ রাজা রামমোহন রায় ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষার একজন উগ্র সমর্থক। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে সরকারি অর্থ ব্যয়ের জন্য ব্রিটিশ সরকারকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ঃ রাজা রামমোহন রায় পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে অ্যাংলো হিন্দু স্কুল, ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ, ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠায় আলেকজান্ডার ডাফ-কে তিনি সহযোগিতা করেছিলেন। হেয়ার স্কুল, কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি, কলকাতা স্কুল সোসাইটি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও রাজা রামমোহন রায় ডেভিড হেয়ারকে সহযোগিতা করেছিলেন।
জাতিভেদ প্রথার বিরোধিতা ঃ রাজা রামমোহন রায় ছিলেন জাতিভেদ প্রথার প্রবল বিরোধিতা। সমস্ত ধর্মের মানুষের মধ্যে সমন্বয়ে ঘটাতে তিনি বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
সতীদাহ প্রথার অবসান ঃ হিন্দু সমাজে প্রচলিত একটি অভিশপ্ত প্রথা ছিল সতীদাহ প্রথা। এটি নিবারণের জন্য রাজা রামমোহন রায় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি আবেদনপত্র বড়োলাট লর্ড বেন্টিংকের কাছে জমা দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয়।
নবজাগরণের অগ্রদূত ঃ রাজা রামমোহন রায় হিন্দু, ইসলামী ও পাশ্চাত্য - এই তিনটি সংস্কৃতি আত্মস্থ করে ধর্ম, সমাজ, সাহিত্য ও রাজনীতিতে একটি নতুন চিন্তাধারার দিক উন্মোচন করেছিলেন।
ধর্ম সংস্কার ঃ তিনি একেশ্বরবাদ প্রচারের জন্য আত্মীয় সভা, ব্রাহ্মসভা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলা ভাষায় উপনিষদ ও বিভিন্ন পুস্তিকা রচনা করে তিনি বাংলার ধর্ম সংস্কারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মূল্যায়ন ঃ রাজা রামমোহন রায় পাশ্চাত্য শিক্ষা ও যুক্তিবাদের প্রসারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পেরেছিলেন। তিনি মধ্যযুগীয় জড়তা, অন্ধবিশ্বাস এবং কুসংস্কারের হাত থেকে ভারতবাসীকে কিভাবে মুক্তি দেওয়া যায় তার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি নবজাগরণের মাধ্যমে ভারতের মানুষদের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি দিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এইসব কারণে রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের 'প্রথম আধুনিক মানুষ' বলে আখ্যায়িত করা হয়।