ধর্ম ও সমাজ সংস্কারে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর ভূমিকা / টীকা ঃ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী -
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম একজন আচার্য। তিনি নব্য বৈষ্ণববাদের প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত। নিন্মে ধর্ম ও সমাজ সংস্কারে বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর ভূমিকা আলোচনা করা হল -
জন্ম ঃ ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া জেলার দহকুল গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি অদ্বৈতাচার্যের বংশধর ছিলেন।
শিক্ষা ঃ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী শান্তিপুরে গোবিন্দ গোস্বামীর টোলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। এরপর তিনি কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে পড়াশোনা করেন এবং কিছুদিন মেডিকেল কলেজেও অধ্যায়ন করেছিলেন।
ব্রাহ্মসমাজে যোগদান ঃ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উৎসাহে ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করেছিলেন। ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচারের কাজে তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ান। ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গেও তিনি কাজ করেছিলেন। এই সময় তিনি কেশবচন্দ্র সেন-এর সঙ্গে সম্মিলিতভাবে ব্রাহ্মধর্ম প্রচার, মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন, ব্রাহ্ম উপাসনা মন্দির, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রভৃতি স্থাপন করেছিলেন। বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী যোগসাধনা সম্পর্কিত একটি বিখ্যাত গ্রন্থ 'প্রশ্নোত্তর' রচনা করেছিলেন। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রাহ্মসমাজের আচার্য হন। তাঁর উদ্যোগে শান্তিপুর, ময়মনসিংহ, গয়া প্রভৃতি অঞ্চলে ব্রাহ্ম মন্দির স্থাপিত হয়েছিল।
নব্য বৈষ্ণব আন্দোলন ঃ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী গয়াতে সাধুদের সংস্পর্শে এসে বৈষ্ণব ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। ফলে তাঁর সঙ্গে ব্রাহ্মসমাজের মতভেদ হয় এবং তিনি ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্ম ধর্ম ত্যাগ করে বৈষ্ণব ধর্ম সাধনায় মগ্ন হন। তিনি যে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করেছিলেন তা নব্য বৈষ্ণব ধর্ম নামে পরিচিত। তিনি ছিলেন নব্য বৈষ্ণব আন্দোলনের প্রধান স্থপতি।
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী নারিজাতির উন্নতি ও নারী শিক্ষার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি শিক্ষার প্রসার ও কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
মৃত্যু ঃ ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ২২ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ) তিনি পুরীতে মারা যান। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিপিনচন্দ্র পাল, অশ্বিনীকুমার দত্ত, সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।