ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজের সীমাবদ্ধতা -
উনিশ শতকের বাংলায় ধর্ম ও সমাজসংস্কারে ব্রাহ্মসমাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। পরে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রীর মতো উল্লেখযোগ্য নেতা ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করে। তৎকালীন সময়ে ব্রাহ্ম সমাজ বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েই গিয়েছিল।
সীমাবদ্ধতা ঃ
শিক্ষিত শ্রেণীর অবদান ঃ ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলন মূলত শহুরে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সমাজের অগণিত নিরক্ষর বা স্বল্পশিক্ষিত সাধারণ মানুষের মধ্যে এই আন্দোলন বিশেষ কার্যকর হয়নি।
শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন ঃ শহরকে কেন্দ্র করেই ব্রাহ্মসমাজের ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। গ্রাম বাংলার দিকে এই আন্দোলন বিশেষ প্রসারিত হয়নি।
নেতৃত্বের মতভেদ ঃ ব্রাহ্ম সমাজের নেতাদের নিজেদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ্য করা গিয়েছিল যা এই আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কেশবচন্দ্র সেনের মতভেদ, আবার কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু প্রমুখ সদস্যদের মতপার্থক্য ব্রাহ্মসমাজের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিয়েছিল।
মতবাদের পরিবর্তন ঃ ব্রাহ্মসমাজে বারংবার মতপার্থক্য দেখা যায়, যা এই আন্দোলনের ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছিল। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মধর্মের অনুষ্ঠান পদ্ধতি নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। অন্যদিকে কেশবচন্দ্র সেন পরবর্তীকালে অবতারবাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়লে ব্রাহ্মসমাজের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
মূল্যায়ন ঃ ব্রাহ্মসমাজের আন্দোলনের বহু অবদান ও ইতিবাচক দিক থাকলেও কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য শেষপর্যন্ত এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়।
আরও পড়ুন ঃ