আধুনিক ইতিহাস চর্চায় স্থাপত্যের ইতিহাস -
আধুনিক ইতিহাস চর্চায় স্থাপত্যের ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। সমকালীন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য স্থাপত্যের ইতিহাসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া ইতিহাসের বিবর্তনের ধারা পরিস্ফুটনের ক্ষেত্রেও স্থাপত্যের ইতিহাসের গুরুত্ব রয়েছে। হরপ্পা, মেহেরগড় প্রভৃতি প্রাচীন ভারতের সভ্যতা গুলির রচনার ক্ষেত্রে স্থাপত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আলেকজান্ডার ক্যানিংহাম, জেমস ফার্গুসন, জন মার্শাল প্রমুখ ভারতের স্থাপত্য ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বাংলার স্থাপত্যের ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সরসীকুমার সরস্বতী, দেবলা মিত্র, হিতেশরঞ্জন সান্যাল প্রমুখ। ভারতের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও স্থাপত্য সংরক্ষণ ও গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ভারতের ইতিহাসের স্থাপত্যের ধারা ঃ
- প্রাচীন ভারতের মেহেরগড়, হরপ্পা সভ্যতা প্রভৃতি সভ্যতা সম্পর্কে জানার জন্য স্থাপত্যের ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- মৌর্য, কুষান, সাতবাহন, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি যুগের স্থাপত্যের নিদর্শন আজও চোখে পড়ে।
- তবে সুলতানি ও মুঘল যুগে স্থাপত্যের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সুলতানি হিন্দু-মুসলিম প্রতিভার সংমিশ্রণে স্থাপত্যশিল্পের উদ্ভব ঘটেছে। সুলতানি যুগের স্থাপত্য গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কুতুবমিনার, আলাই দরওয়াজা, ফিরোজাবাদের প্রাসাদ, দুর্গ প্রভৃতি।
- মুঘল যুগে স্থাপত্যরীতির ক্ষেত্রে ইন্দো-পারসিক শিল্পরীতির প্রভাব দেখা যায়। এই সময় গড়ে ওঠা বিখ্যাত স্থাপত্য গুলির মধ্যে ছিল - দিল্লির লালকেল্লা, আগ্রার তাজমহল, জামা মসজিদ, বুলন্দ দরওয়াজা প্রভৃতি।
- ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে নির্মিত হয়েছে কলকাতার ভিক্টোরিয়া, মেমোরিয়াল, মাদ্রাজের সেন্ট ফোর্ট জর্জ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য।
মূল্যায়ন ঃ প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত ভারতে যেসব স্থাপত্য গড়ে উঠেছে সেগুলির মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট। স্থাপত্য শিল্পের ফলে সমকালীন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, রাজনীতি পরিস্থিতি জানার জন্য আধুনিক ইতিহাসে তা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।