আধুনিক ইতিহাস চর্চায় স্থাপত্যের ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য -
মানবসভ্যতার বিবর্তনের একটি দিকচিহ্ন হিসাবে স্থাপত্যের গুরুত্ব অপরিসীম। মানবসভ্যতার সূচনালগ্নে মানুষ প্রথমে জঙ্গলবাসী, পরে গুহাবাসী ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ গাছের ডালপালা, মাটি, ইট, পাথর দিয়ে ঘরবাড়ি বানাতে শেখে এবং ধীরে ধীরে বড়ো বড়ো প্রাসাদ, অট্টালিকা, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, সমাধি প্রভৃতি গড়ে তোলে। মানবসভ্যতা টীকে থাকার অন্যতম উপাদান হল স্থায়ী বসতি নির্মাণ। বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতা যেমন - সুমের, মেসোপটেমিয়া, হরপ্পা প্রভৃতি সভ্যতায় মানুষ স্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছিল। নিন্মে আধুনিক ইতিহাস চর্চায় স্থাপত্যের ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হল -
হরপ্পা রীতি ঃ প্রাচীন ভারতীয় এই ধারায় আজ পর্যন্ত ঘরবাড়ী তৈরি করা হয়। পাশ্চাত্যের ডোরীয় রীতির সঙ্গে এই ধারার সাদৃশ্য আছে।
মৌর্য ও কুষাণ রীতি ঃ এই যুগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল ইট-কাঠ পাথরের নির্মাণ, সূক্ষ্ম কারুকার্য। রোমান ও পারসিক রীতির সঙ্গে এর সাদৃশ্য আছে এবং এই ধারায় ভারতে বহু মন্দির ও প্রাসাদ নির্মাণ করা হয়েছে।
ইসলামি রীতি ঃ ভারতে স্থাপত্যের ক্ষেত্রে স্যারাসিন, বাইজানটাইন এবং পারসিক রীতি লক্ষ্য করা যায়। ভারতের বহু মিনার, গম্বুজ, খিলানের সমন্বয়ে মসজিদ, প্রাসাদ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
ভিক্টোরীয় রীতি ঃ রোমক, গথিক রীতির সমন্বয়ে ভারতে এই রীতির প্রয়োগ হয়। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ভিক্টোরিয়া ও মেমোরিয়াল ভবন।
আধুনিক ইতিহাস চর্চায় স্থাপত্যের ইতিহাসের গুরুত্ব -
- কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে স্থাপত্যগুলি নির্মাণ করেছিলেন, তা জানা গেলে স্থাপত্যকীর্তির প্রয়োজনীয়তা বা উপযোগিতা সম্পর্কে জানা যায়।
- স্থাপত্যের মধ্যে দিয়ে সামাজিক সচলতার বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
- স্থাপত্যকীর্তির পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কে জানা গেলে সমকালীন সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে বুঝতে পারা যায়।
- স্থাপত্যরীতির পর্যালোচনা করার মধ্যে দিয়ে স্থাপত্য শিল্পের অগ্রগতি ও স্থানীয় রীতির সমন্বয় সম্পর্কে জ্ঞানলাভ সম্ভব হয়।