সামরিক ইতিহাস চর্চা বলতে কি বোঝো

সামরিক ইতিহাস চর্চা -

ইতিহাসের আলোচনার একটি বিষয় হল সামরিক ইতিহাস। সূচনার প্রথম পর্বে মানুষ তিরধনুক, বল্লম, লাঠি প্রভৃতি নিয়ে যুদ্ধ করত। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটেছে এবং মানুষ আজ পারমাণবিক অস্ত্রের যুগে পৌঁছেছে। এই দুই সময়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ে সনাতনী অস্ত্রের উন্নতি, গুলিবারুদের ব্যবহার, সৈন্য প্রশিক্ষণ প্রভৃতির উন্নতি ঘটেছে। এইসব কিছু মিলিয়েই সামরিক ইতিহাস রচিত হয়। 

প্রাচীন ও মধ্যযুগের সামরিক ইতিহাস ঃ প্রাচীন যুগে মানুষ পাথর ও ধাতুর অস্ত্র ব্যবহার করত। এরপর বারুদের আবিষ্কার, কামানের আবিষ্কার ও ব্যবহার, সামরিক প্রশিক্ষণ, যুদ্ধ কৌশল সামরিক জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। মধ্যযুগের শুরুতে ইউরোপীয় সামন্তদুর্গ এবং নাইটদের যে গুরুত্ব ছিল, তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

আধুনিক যুগের সামরিক বিপ্লব ঃ শিল্প বিপ্লবের পর ইউরোপে অস্ত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সব ধরণের অস্ত্রের গুণমান বৃদ্ধি পায় ও তৈরি হয় আরও নতুন নতুন ধরণের অস্ত্র। বাষ্পচালিত জাহাজে দূরপাল্লার কামান বসানো হয়। আবিষ্কৃত হয় ডুবোজাহাজ বা সাবমেরিন, সাঁজোয়া গাড়ি, যুদ্ধ বিমান সহ আরও অনেক সামরিক জিনিস। ফলে যুদ্ধ সীমিত জায়গায় বদ্ধ না থেকে জল-স্থল-অন্তরীক্ষে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

গবেষণার বিষয়বস্তু ঃ ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন ইংল্যান্ড বিরোধী যুদ্ধের সূচনা করলে সামরিক ইতিহাসের সূচনা ঘটে। নেপোলিয়নের উপদ্বীপীয় যুদ্ধ, ওয়াটারলু যুদ্ধ, ট্রাফালগারের যুদ্ধ সামরিক জগতে সাড়া ফেলেছিল। মূলত এসময় থেকেই ইংল্যান্ডে সামরিক ইতিহাস চর্চার সূচনা ঘটে। ধীরে ধীরে সামরিক ইতিহাস ইতিহাসের একটি আলদা শাখা রূপে বিবেচিত হয়। 

সামরিক ইতিহাসে যুদ্ধের সাল, কার সাথে কার যুদ্ধ, মোট সৈন্য সংখ্যা, ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধকৌশল, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, বিজয়ী পক্ষ প্রভৃতি বিষয়ের উল্লেখ থাকে। এই গুলির সামাজিক, রাজনীতিক, আর্থিক প্রেক্ষাপট ইতিহাসে আলোচিত হয়। 


গুরুত্ব ঃ সামরিক ইতিহাসচর্চা থেকে সমকালীন সামরিক সরঞ্জামের গুণগতমান, যুদ্ধ প্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। সমাজ ও পরিবেশে যুদ্ধের কি প্রভাব পড়ে এবং এর পিছনে থাকা কূটনৈতিক নীতি সমূহের প্রয়োগের মতো বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সামরিক ইতিহাসে আলোচনা করা হয়। তাই আধুনিক ইতিহাসে সামরিক ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম।

Post a Comment

Previous Post Next Post