আধুনিক ইতিহাস চর্চায় স্থানীয় ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব -
বিভিন্ন প্রকার ইতিহাসের মধ্যে আঞ্চলিক ইতিহাস বা স্থানীয় ইতিহাস হল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্থানীয় ইতিহাস বলতে কোন নির্দিষ্ট এলাকার ইতিহাসকে বোঝায়। স্থানীয় ইতিহাস গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোন অঞ্চলের প্রাচীন সাহিত্য, লোককাহিনী, লোকসংস্কৃতি, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অবস্থা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় ইতিহাস চর্চা ঃ
স্থানীয় ইতিহাস চর্চার ঐতিহ্য প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষণীয়। প্রাচীন ভারতের স্থানীয় ইতিহাসের প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল কলহনের লেখা রাজতরঙ্গিণী গ্রন্থ। সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত কাশ্মীরের ইতিহাস জানার জন্য এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মেরুতুঙ্গের প্রবন্ধ চিন্তামণি গ্রন্থ থেকে সমকালীন গুজরাটের ইতিহাস জানা যায়। এছাড়া অন্যান্য গ্রন্থ থেকে সিন্ধু, দক্ষিণ ভারত ও নেপালের ইতিহাস জানা যায়।
- আধুনিক যুগে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'বাংলার ইতিহাস' এবং নীহাররঞ্জন রায়ের লেখা 'বাঙালির ইতিহাস' প্রভৃতি গ্রন্থ বাংলার সমাজ-সংস্কৃতির প্রমাণ দেয়।
- ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় ইতিহাস চর্চায় বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হলে ডিসট্রিক্ট গেজেটিয়ার প্রকাশ করা হয়।
- আধুনিক যুগে স্থানীয় ইতিহাস চর্চায় জেলা, ব্লক বা কোন গ্রামের ইতিহাস নিয়েও চর্চা করা হয়। যেমন পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, হুগলী, বীরভূম প্রতিটি জেলার ইতিহাস। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার বিভিন্ন গোষ্ঠী ও স্থানীয় গবেষকগণ প্রতিনিয়ত জেলাগুলি নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। তাছাড়া স্থানীয় পত্র-পত্রিকা গুলিও স্থানীয় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে।
স্থানীয় ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব ঃ
- সব জায়গার পরিচিতি প্রামাণ্য ইতিহাসে থাকে না। গুরুত্ব কম হল বা উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা না ঘটলে সেই স্থানের বিবরণ ইতিহাসে থাকে না। তাই স্থানীয় ইতিহাস এক্ষেত্রে সেই অভাব পূরণ করে।
- অনেক সময় স্থানীয় ইতিহাসকে জাতীয় ইতিহাস রচনা করার সময় উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
- কোন স্থানের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে অতীত থেকে বর্তমানে নিয়ে আসে স্থানীয় ইতিহাস।
- কোন অঞ্চলের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের কাহিনী তুলে ধরে সেই অঞ্চলের স্থানীয় ইতিহাস।
- কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর মানুষদের সম্পর্কে জানার জন্য স্থানীয় ইতিহাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।