যুদ্ধক্ষেত্রে বারুদের ব্যবহার এবং ইউরোপীয় রাজনীতির ওপর তার প্রভাব -
প্রাচীনকাল থেকে মানুষ লাঠি, বল্লম, পাথর ইত্যাদির সাহায্যে যুদ্ধ করে এসেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বারুদের আবিষ্কার ও ব্যবহারের ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসে। দশম শতাব্দীতে চিনে সর্বপ্রথম বারুদের আবিষ্কার হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যের পথ ধরে এই প্রযুক্তি ইউরোপে পৌঁছে যায়। দ্বাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের রজার বেকন নামে একজন বিজ্ঞানী বারুদের আবিষ্কার করেছিলেন। বারুদের আবিষ্কার সামরিক ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটায় এবং রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে।
বারুদের প্রভাব ঃ
- দ্বাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে যে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধ চলেছিল, সেখানে আইবেরীয় যুদ্ধ ইংল্যান্ড ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কামান ব্যবহার করেছিল।
- ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে প্যাভিয়া-র যুদ্ধে স্পেনীয় বাহিনী কামান ব্যবহার করেছিল। এরফলে বিশাল ফরাসি অশ্বারোহী বাহিনী পরাজিত হয়।
- ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে অটোমান তুর্কিরা কনস্ট্যান্টিনোপল জয়ের সময় কামান ব্যবহার করেছিল। এরফলে বাইজানটাইন বাহিনী পরাজিত হয়েছিল।
- ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে অষ্টম চার্লস ইতালি অভিযানের সময় ভারী কামান ব্যবহার করেছিলেন।
- ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপতের প্রথম যুদ্ধে বাবর কামানের ব্যবহার করেছিলেন।
ইউরোপীয় রাজনীতিতে বারুদের প্রভাব ঃ
- বারুদের আবিষ্কারের ফলে ইউরোপে সামন্তপ্রভুর বাহিনীর গুরুত্ব লোপ পায় এবং তাদের একচেটিয়া সামরিক আধিপত্যের অবসান ঘটে।
- যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র, যুদ্ধের প্রযুক্তি ও কৌশলের আমূল পরিবর্তন ঘটে।
- ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গোলন্দাজ বাহিনী গঠন করে এবং সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়।
- ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটে এবং নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, বারুদের আবিষ্কার ছিল যুদ্ধক্ষেত্র তথা সামরিক জগতের বিপ্লব। বারুদের ফলে শক্তিশালী অস্ত্রশস্ত্র তৈরি হতে থাকে এবং প্রতিটি দেশ একে অপরের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলে রাজনীতির সুর বদল হয়।