আধুনিক ইতিহাসে দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস চর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো

আধুনিক ইতিহাসে দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস চর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো / দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস বলতে কী বোঝো -

দৃশ্য শিল্পের বিভিন্ন ধারা যেমন স্থাপত্য, ভাস্কর্য, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়। ফলে দৃশ্য শিল্প বর্তমানে ইতিহাস চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে এবং এই নিয়ে শুরু হয়েছে নানা গবেষণা। 

দৃশ্যশিল্প-এর সংজ্ঞা ঃ দৃশ্য শিল্প বলতে অনেক কিছুকেই বোঝায়। যেমন - হাতে আঁকা ছবি, পোড়া মাটির ভাস্কর্য, পাথর বা কাঠের ওপর খোদাই করা চিত্র, সুন্দরভাবে তৈরি বাড়িঘর, মন্দির, মসজিদ প্রভৃতি স্থাপত্যও এর অন্তর্ভুক্ত। কোন ঘটনা বা ব্যক্তিবিশেষের কোন বিশেষ মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করা হলে সেই ঘটনা বা সেই ব্যক্তির উপস্থিতির প্রমাণ হয় সেই ক্যামেরাবন্দি আলোকচিত্রটি। তাই ফটোগ্রাফিও বর্তমানে দৃশ্য শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইতিহাসের উপাদান হিসাবে দৃশ্য শিল্প গুলির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাশ্চাত্যের মতো ভারতেও দৃশ্য শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। 

শিল্পী ও শিল্পকথা -

 ই বি হ্যাভেল এবং এ কে কুমারস্বামী হলেন দুজন বিখ্যাত শিল্প গবেষক। দুজনেই কলকাতা আর্ট কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গগনেদ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ওকাকুরা, ভগিনী নিবেদিতা, নন্দলাল বসু এই শিল্পের বিকাশে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। এই শিল্পকলা বিষয়ে লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল - অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের লেখা চিত্রকথা। এ বিষয়ে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রচেষ্টায় বঙ্গীয় কলা সংসদ প্রতিষ্ঠা। 


ভারতীয় ইতিহাসের ধারায় আঁকা ছবি ও ফটোগ্রাফি -

আঁকা ছবি ঃ 

  • ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভীমবেটকার গুহাচিত্রগুলিতে মানুষের শিকারের দৃশ্য আঁকা আছে। যা থেকে মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় পাওয়া যায়।
  • হরপ্পা ও মেহেরগড় সভ্যতার মানুষের হাতে আঁকা ছবি সমকালীন ইতিহাস চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ইতিহাসের উপাদান হিসাবে অজান্তা, ইলোরা প্রভৃতি গুহাচিত্রগুলি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
  • সুলতানি ও মোঘল যুগে রাজারা বিভিন্ন চিত্রশিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। 
  • ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় চিত্রশিল্পীরা বাঙালীবাবু, ব্রিটিশসাহেব, মেম প্রমুখের ছবি আঁকতেন, এছাড়াও গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত চিত্রশিল্পীরা তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের অনেক ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছেন।
  • স্বদেশী আমলে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এঁকেছিলেন ভারত মাতার ছবি। যা সেই সময় ভারতীয়দের জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

ফটোগ্রাফি ঃ ১৮৫০ -এর দশকে ভারতে ক্যামেরার দ্বারা ছবি তোলা শুরু হয়। যা আঁকা ছবির থেকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ছিল। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের সময় ছবি তোলার জন্য বহু ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার এদেশে এসেছেন এবং বিদ্রোহের বহু মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছেন।


গুরুত্ব ঃ দৃশ্য শিল্পের বিভিন্ন গুরুত্বগুলি হল -

     (i) ভারতীয় শিল্পকলার ধর্মীয় অনুষঙ্গ, নব্য ভারতীয় চিত্ররীতির উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে জানতে দৃশ্যশিল্পের ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম। 

     (ii) দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস থেকে শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গি, রুচিবোধ ও সংস্কৃতির পরিচয় মেলে। বিভিন্ন সময়ের পোশাক পরিচ্ছদ ও সংস্কৃতির মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টি দৃশ্য শিল্পের ইতিহাসের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post