প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব "আধুনিক ইতিহাস চর্চায় খেলার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করো" / "আধুনিক ইতিহাস চর্চায় খেলার ইতিহাসের গুরুত্ব কি" -এই প্রশ্নটি।
আধুনিক ইতিহাস চর্চায় খেলার ইতিহাস -
সাধারণ অর্থে খেলা বলতে বোঝায় একটি সংগঠিত, নিয়মনিষ্ঠ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, বিনোদন মূলক ও দক্ষতামূলক শারীরিক কার্যকলাপ। প্রাচীন গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলিতে বিনোদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় ছিল খেলাধুলা। ধীরে ধীরে তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং আজকের দিনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই বর্তমানে ইতিহাসের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসাবে খেলার ইতিহাস উঠে এসেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা হল ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি। এগুলি বাদেও গ্রামীণ লোকক্রীড়াগুলির গুরুত্ব অপরিসীম। নিন্মে খেলার ইতিহাস চর্চার সূচনা এবং ভারতে খেলার ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
(i) খেলার ইতিহাস চর্চার সূচনা ঃ ১৯৭০ -এর দশকে ইউরোপে খেলার ইতিহাস চর্চার সূচনা হয়েছিল। খেলার ইতিহাস চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন রিচার্ড হোল্ট, জে এ ম্যাঙ্গান প্রমুখ। জে এ ম্যাঙ্গান-এর লেখা দ্য গেমস এথিক অ্যান্ড ইম্পিরিয়ালজম (The Games Ethic and Imperialism) হল খেলার ইতিহাসচর্চার একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ সোসাইটি অব স্পোর্টস হিস্ট্রি (British Society of Sports History) প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে খেলার ইতিহাস চর্চা একটি সাংগঠনিক রূপ লাভ করে। বিংশ শতাব্দীর জীবনধারার একটি অন্যতম প্রধান সামাজিক অভ্যাস ছিল খেলাধুলা।
(ii) ভারতে খেলার ইতিহাস চর্চা ঃ ১৯৮০ -এর দশকে ভারতে খেলার ইতিহাস নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। ভারতে খেলার ইতিহাস নিয়ে বিশেষ গবেষণা করেছিলেন সৌমেন মিত্র। তিনি ঔপনিবেশিক বাংলার ফুটবল, জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। এছাড়াও -
- সাম্প্রতিককালে খেলার ইতিহাস চর্চার যারা বিশেষ অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বোরিয়া মজুমদার। তিনি টোয়েন্টি-টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম ঃ এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অফ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট নামক খেলার ইতিহাসচর্চার গ্রন্থটি রচনা করেছেন।
- ঐতিহাসিক নলীন মেহতার সঙ্গে জে এ ম্যাঙ্গান রচনা করেছেন 'অলিম্পিকস ঃ দ্য ইন্ডিয়া স্টোরি'।
আধুনিক ইতিহাস চর্চায় খেলার ইতিহাসের গুরুত্ব -
- খেলা জাতীয়তাবাদী চেতনা বৃদ্ধি করে এবং গণ আবেগ সৃষ্টি করে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের ফলে বাঙালি মনে যে ব্রিটিশ বিরোধী ক্ষোভ জমেছিল তার প্রকাশ ঘটেছিল ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান ফুটবল দল কর্তৃক ইস্ট ইয়র্ককে পরাজিত করে। এই ঘটনা জনমানসে ব্যাপক জাতীয়তাবাদী উন্মাদনার সৃষ্টি করেছিল। ড. রামচন্দ্র গুহ-এর মতে এই ঘটনার পর জাতীয়তাবাদী প্রকাশ দেখে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করে এবং রাজধানী কোলকাতা থেকে দিল্লী স্থানান্তরিত করে।
- খেলায় নারীদের অংশগ্রহণ দেখে সমাজে নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
- খেলার ইতিহাস চর্চার মাধ্যমে কোন দেশের সমাজ-সংস্কৃতির পরিচয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। খেলাধুলার মাধ্যমে বৃহত্তর সমাজের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি ফুটে ওঠে।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায়, বর্তমানে খেলার ইতিহাসচর্চার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে -এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমানে আধুনিক সভ্যতার চাপে গ্রামগঞ্জের সেই খেলাগুলি - কানামাছি, লুকোচুরি, কিৎ কিৎ, হা-ডু-ডু, ডাংগুলি, কুমির ডাঙা সবই আজ লুপ্তপ্রায়, ইতিহাসের পাতায়। তবে সামাজিক নতুন ইতিহাসচর্চা এবং খেলাধুলার ইতিহাসে এই লোকক্রীড়াগুলির অসামান্য গুরুত্ব রয়েছে।
আরও পড়ুন ঃ