জাতীয় আন্দোলনের মাধ্যম হিসাবে সংগীতের ভূমিকা -
শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাসে সংগীতের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। কেবলমাত্র চিত্ত বিনোদনের মাধ্যমের পাশাপাশি, সমকালীন সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে সংগীতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সংগীতের মাধ্যমে কোন দেশ বা জাতির সাংস্কৃতিক বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। সংগীতের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই জাতীয় আন্দোলনের প্রসারে সংগীতের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। নিন্মে জাতীয় আন্দোলন প্রসারে সংগীতের ভূমিকা আলোচনা করা হল -
দেশাত্মবোধ জাগরণে সংগীতের ভূমিকা ঃ ঔপনিবেশিক ভারতে জাতীয়তাবোধের বিকাশে সংগীত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বন্দেমাতরম, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের স্বদেশী আন্দোলনের যুগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলার মাটি বাংলার জল, অতুলপ্রসাদের বল বল বল সবে প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে স্বদেশ প্রেম জাগিয়েছিল।
গণসংগীতের ধারণা ঃ ১৯৪০ -এর দশকে থেকেই জাতীয় জাগরণে গণসংগীত এক নতুন ধারার সূচনা করে। এটি ক্রমশ দেশের সাধারণ মুক্তিকামী মানুষের নিজস্ব সংগীত হয়ে ওঠে। জাতীয়তাবোধ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে নিপীড়িত মানুষের শোষণের কাহিনীও এই গণসংগীতের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই সময়ের বিশিষ্ট কয়েকজন গণসংগীত শিল্পী ছিলেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস, সলীল চৌধুরী, বিনয় রায় প্রমুখ।
লোকসংগীতের মাধ্যমে স্বদেশপ্রেম জাগরণ ঃ জাতীয় আন্দোলনের অন্য একটি মাধ্যম ছিল বাংলার প্রাচীন লোকগান। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের স্বদেশী আন্দোলনের সময় চারণকবি মুকুন্দদাসের গান জনমানসে গভীর আবেদন জানিয়েছিল। বাউল, ভাটিয়ালি, সারিগান প্রভৃতি গান সহজসরল গ্রামীণ মানুষদের মধ্যে স্বদেশপ্রেমের উন্মেষ ঘটিয়েছিল।