প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব দশম শ্রেণির ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়ের একটি প্রশ্ন "সামাজিক ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চার গতিপ্রকৃতি আলোচনা করো" / "আধুনিক ইতিহাস চর্চায় খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করো" / "খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস বলতে কি বোঝ"।
আধুনিক ইতিহাস চর্চায় খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস -
জীবনধারণের ক্ষেত্রে মানুষের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হল খাদ্য। তবে যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে, ফলে ইতিহাসও পরিবর্তন হয়। তাই ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নিন্মে খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল -
খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চার প্রতিষ্ঠান ঃ
খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চার জন্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ কালিনারি প্রফেশনালস নামক একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসের ধারায় ভারতীয় খাদ্য বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ঃ
- কে টি আচয়-এর লেখা ইন্ডিয়ান ফুড ঃ এ হিস্টোরিক্যাল কম্প্যানিয়ন, এ হিস্টোরিক্যাল ডিকশনারি অফ ইন্ডিয়ান ফুড।
- ক্লড মার্কোভিটস সম্পাদিত এ হিস্ট্রি অফ মডার্ন ইন্ডিয়া, ১৮৪০-১৯৫০
- প্যাট চ্যাপম্যান-এর লেখা ইন্ডিয়া ঃ ফুড এন্ড কুকিং।
- চিত্রিতা ব্যানার্জি ভারতীয় খাদ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে গবেষণার কাজ করেছেন।
ইতিহাসের ধারায় খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঃ
মানবসভ্যতার আদিকাল থেকেই মানুষের খাদ্য ছিল কাঁচা মাংস এবং বিভিন্ন ফলমূল। মানুষ তখন খাদ্য সংগ্রাহক রূপে জীবন কাটাত। ধীরে ধীরে মানুষ আগুণের ব্যবহার শিখল। তারপর তারা খাদ্য পুড়িয়ে খেতে আরম্ভ করল এবং নব্যপ্রস্তর যুগে এসে মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদকে পরিণত হল। এরপর মানব সভ্যতায় হরপ্পা, বৈদিক যুগ, মৌর্য যুগ, মুঘল যুগে ভারতে খাদ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। হরপ্পা সভ্যতায় মানুষ মূলত গম, যব, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করত। বৈদিক যুগে মানুষের খাবার ছিল চাল, যব, গম, মাছ, মাংস, শাকসবজি, দুধ প্রভৃতি। মৌর্য, পাল, গুপ্ত, সেন যুগে বৌদ্ধ ধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাবে মানুষ নিরামিষ খাদ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু ভারতের খাদ্যাভ্যাসের সংস্কৃতি সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয় সুলতানি ও মুঘল যুগে। মুঘল আমলে ভারতে মোগলাই খাবারের রীতি আসে। আবার ঔপনিবেশিক ভারতে পর্তুগিজদের হাত ধরে মিষ্টি জাতীয় খাবারে পরিবর্তন আসে। পর্তুগিজরাই ভারতে আলু খাওয়ার প্রচলন শুরু করে। তাছাড়া ব্রিটিশ আমলে বিভিন্ন বিদেশি খাবারের প্রচলন ঘটে।
মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলের কারণ ঃ
বিভিন্ন কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলে গিয়েছিল। যেমন -
(i) রান্নার কৌশল পরিবর্তন ঃ আগুণের ব্যবহার শেখার ফলে মানুষ মাংস পুড়িয়ে খেতে শুরু করল, ফলে রান্নার কৌশল বদলে গেল। ধীরে ধীরে রান্নায় বিভিন্ন তেল, মশলা ইত্যাদি ব্যবহার হতে শুরু করলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হয়।
(ii) খাদ্যের রকমফের ঃ মানুষের প্রধান খাদ্যের মধ্যে মাছ, মাংস, দুধ, গম, চাল, যব ইত্যাদি প্রধান। সময়ের সাথে সাথে মানুষ এইসব উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন রকম খাদ্যের প্রকারভেদ তৈরি করতে শিখলে তা খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস বদল করে দেয়।
(iii) অঞ্চল বা পরিবেশ ঃ কোন পরিবেশ বা অঞ্চলের প্রভাব সেই অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিলক্ষিত হয়। যেমন - পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভাত, ডাল, মাছ ইত্যাদি খাদ্য তালিকার প্রথমে থাকে, আবার দক্ষিণ ভারতে ইডলি, ডোসা, সামবার, পাশাম ইত্যাদি খাদ্যের তালিকায় থাকে। দক্ষিণ ভারতে রান্নার সঙ্গে তেতুলের ব্যবহার হয়ে থাকে।
গুরুত্ব ঃ খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসের গুরুত্বগুলি হল -
- মানুষের ধর্মীয় ও আঞ্চলিক পরিচয় খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস থেকে জানা যায়।
- খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে দিয়ে মানুষের স্বভাব এবং প্রকৃতির পরিচয় ফুটে ওঠে।
- খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে দিয়ে মানুষের আর্থিক পরিচয় ফুটে ওঠে।
- খাদ্যাভ্যাস মানুষের অতীতের ঐতিহ্য বহন করে।
আরও পড়ুন ঃ