প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব দশম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায় থেকে একটি ৪ মার্কের প্রশ্ন "নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো" / "নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো" / "নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চা কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে"।
নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্য -
ইতিহাস বলতে আগে শুধু রাজা ও রাজবংশের ক্রিয়াকলাপকে বোঝানো হত। তবে ১৬৬০ -এর দশক থেকেই এই ধারণার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। কারণ এই সময় থেকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বলতে থাকেন, একটি রাজপরিবারের কাহিনী কখনোই একটি সমগ্র দেশের ইতিহাস হতে পারে না। কোন দেশের প্রকৃত ইতিহাস হল ঐ দেশের জনসাধারণের ইতিহাস। এই ধারণাকে কেন্দ্র করেই ইউরোপে নতুন সামাজিক ইতিহাসের চর্চা শুরু হয়। ১৯৮০ -এর দশক থেকে ভারতেও নিন্ম বর্গের ইতিহাস চর্চা শুরু হয়।
নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার আলোচ্য বিষয় -
- নতুন সামাজিক ইতিহাসে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ থেকে অন্ত্যজ শ্রেণি-সহ সকলেই অন্তর্ভুক্ত।
- নতুন সামাজিক ইতিহাসে মানুষের সামাজিক অবস্থান, আচার-আচরণ, খাদ্য পোশাক-পরিচ্ছদ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, বিনোদন সবকিছুই ইতিহাসের উপাদান হিসাবে স্বীকৃত।
- সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, মানসিকতা ও কার্যকলাপ নতুন সামাজিক ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে।
বৈশিষ্ট্য ঃ নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল -
(i) অ্যালাল মতবাদ ঃ অ্যানাল গোষ্ঠীর ঐতিহাসিক মার্ক ব্লখ, রয় লাদুরি প্রমুখের ইতিহাস চর্চায় সামাজিক কাঠামো ও প্রক্রিয়া যেমন - বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি, আন্দোলন, নগরায়ন, পরিবার, শিক্ষা, শিল্পায়ন, সামাজিক গতিপ্রকৃতি ইত্যাদির ক্রিয়া ও গতির ওপর মূল গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(ii) সাধারণ মানুষের কথা ঃ মানুষের সামাজিক জীবন গড়ে ওঠে আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, শিক্ষা, বিনোদন, সভ্যতা-সংস্কৃতি প্রভৃতি নিয়ে। নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চায় এই বিষয়গুলি এবং সাধারণ মানুষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সামাজিক ইতিহাসের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল - কার্ল মার্কস-এর দ্য জার্মান ইডিওলজি (The German Ideology), জি এম ট্রেভেলিয়ন-এর ইংলিশ সোশ্যাল হিস্ট্রি, এ সার্ভে অফ সিক্স সেঞ্চুরিস : চসার টু কুইন ভিক্টোরিয়া (English Social History, A Survey of Six centuries : Chaucer to Queen Victoria)প্রভৃতি।
(iii) নিন্মবর্গের কথা ঃ একদল ঐতিহাসিক নিন্মবর্গের মানুষদের বংশপরিচয়, বসতিবিস্তার, সংস্কৃতি, জীবনধারা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রভৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন, যা নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এই ধরণের ইতিহাস চর্চায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। রণজিৎ গুহ, শাহিদ আমিন, গৌতম ভদ্র প্রমুখ।
নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব -
- নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চায় নিন্মবর্গের দরিদ্র সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, সমাজ ও রাষ্ট্রে তাদের অবস্থান, প্রভাব ইত্যাদি সবকিছুই আলোচিত হওয়ায় ইতিহাসচর্চার পরিধির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে।
- ভারতের নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চায় ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নিন্মবর্গের মানুষের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চায় সমাজের বিভিন্ন ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করায় নতুন সামাজিক ইতিহাসের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
মূল্যায়ন ঃ নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চার ফলে ইতিহাসের পরিধি বিস্তৃত হয়েছে এবং সামগ্রিক ভাবে ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্র ও জ্ঞানের সম্প্রসারণ ঘটেছে। ফলে নতুন সামাজিক ইতিহাসের হাত ধরে 'ইতিহাস' একটি নতুন রূপ লাভ করেছে।
আরও পড়ুন ঃ