প্রিয় ছাত্রছাত্রী, আজ আমি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব "হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের কিরূপ সমাজচিত্র পাওয়া যায়" / "হুতোম প্যাঁচার নকশায় সমকালীন সমাজের ছবি কিভাবে ফুটে উঠেছে" - এই প্রশ্নটি।
হুতোম প্যাঁচার নকশায় উনিশ শতকের বাংলা সমাজ -
কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিত্তশালী সিংহ পরিবারের সন্তান ছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। হুতোম প্যাঁচার নকশা-য় তিনি তৎকালীন কলকাতা ও তার আশপাশের অঞ্চলগুলির ধনী ও শিক্ষিত বাঙালি সমাজের তথা বাবু সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন। এই সমাজ ছিল তৎকালীন বাঙালি সমাজের অগ্রণী অংশ। ব্রিটিশ আমলে এই শ্রেণির লোক অর্থ সম্পদে ফুলে ফেঁপে উঠেছিল।
সমাজের ধ্বজাধারীদের শ্রেণীবিভাজন ঃ হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে লেখক যাদের নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন তারা লেখকের নিজের শ্রেণীর এবং তৎকালীন সমাজের অগ্রবর্তী ধ্বজাধারী মানুষজন। লেখক এই শ্রেণির মানুষদের তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা -
(i) ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ও সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী।
(ii) ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কিন্তু অন্ধ অনুকরণকারী নন।
(iii) ইংরেজি না জানা গোঁড়া হিন্দু।
অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন ঃ তৎকালীন বাংলা সমাজে এইসব ব্যক্তিদের প্রায় সকলেই কমবেশি ফন্দিফিকির করে বা অসৎ উপায়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত। এই সময় হীনতা, কপটতা সমাজের স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছিল।
উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন ঃ এই সময় কলকাতা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী শহরতলিতে এক শ্রেণীর মানুষ ভ্রষ্টাচারপূর্ণ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করত।
ধর্মীয় গোঁড়ামি ঃ হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, তৎকালীন সমাজে হিন্দু, ব্রাহ্ম, খ্রিস্টান সব ধর্মেরই কিছু গোঁড়া প্রকৃতির মানুষ মানবিকতার উপরে ধর্মীয় গোঁড়ামিকে বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করে। এই সময় সমাজের সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহের পক্ষে ও বিপক্ষে জনমত যে দ্বিধাবিভক্ত ছিল তাও জানা যায়।
মূল্যায়ন ঃ 'প্রথম প্যাঁচার নকশা' ছিল তার পূর্ববর্তী গ্রন্থগুলির তুলনায় অনন্য। কারণ, এই গ্রন্থে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর চরিত্রচিত্রণে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের যে তীব্রতা লক্ষ্য করা যায়, তা পূর্ববর্তী কোন গ্রন্থে লক্ষ্য করা যায় না।