যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করো

আধুনিক ইতিহাস চর্চায় যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস -

মানবসভ্যতার সঙ্গে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ জলপথে ও স্থলপথে বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে দুরের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। আধুনিক যুগে আকাশযান ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ আরও সহজ হয়েছে। কালক্রমে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যানবাহন ও যোগাযোগের ইতিহাস জানার জন্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল সুনীল কুমার মুন্সির লেখা জিওগ্রাফি অফ ট্রান্সপোর্টেশন ইন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া আন্ডার ব্রিটিশ রাজ, নিতিন সিনহার লেখা ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিষয়ক গ্রন্থ এবং ইয়ান কের-এর লেখা ইঞ্জিনস অফ চেঞ্জ ঃ দ্য রেলরোডস দ্যাট মেড ইন্ডিয়া।

ইতিহাসের ধারায় যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বিকাশ -

ইতিহাসের পথ ধরে মেহেরগড়, হরপ্পা সভ্যতার অভ্যন্তরীণ স্থলপথের পরিচয় পাওয়া যায়। মৌর্য যুগে তাম্রলিপ্ত থেকে তক্ষশীলা এবং দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কপথের পরিচয় পাওয়া যায়। কুষাণ যুগে ভারতের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার যোগাযোগ এবং মধ্যযুগে শের শাহ নির্মিত সড়ক-ই-আজম ও অন্যান্য অনেক পথের কথা আমাদের জানা। স্থলপথের যানবাহনের মাধ্যম ছিল হাতি, ঘোড়া, গোরু, উট, গাধা, মোষ প্রভৃতি প্রাণী। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় মানুষ ডুলি ও পালকির ব্যবহার করত।

জলপথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নৌকা, জাহাজ, ডিঙ্গি, ভেলা। ভারতের পশ্চিম ও পূর্ব উপকূলের বিভিন্ন বন্দর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত নদীপথ সম্পর্কেও জানা যায়।

১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে জেমস ওয়াট বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন এবং ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে জর্জ স্টিফেন্সন বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন। ফলে প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি হয় এবং যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটতে শুরু করে। ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে আধুনিককালে ট্রেন, ট্রাম, বাস ইত্যাদি চালু হয়। 

লর্ড ডালহৌসির আমলে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রথম রেলপথের বিস্তার ঘটে। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে রেলপথ নির্মাণে গ্যারান্টি ব্যবস্থা চালু হয়। পূর্বের ডাক ব্যবস্থার সঙ্গে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থাও চালু হয়।

মূল্যায়ন ঃ যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস আধুনিক ইতিহাসচর্চায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে সাহায্য করেছে। কারণ যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে মানুষের সার্বিক উন্নয়ন জড়িত থাকে। তবে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক অন্য ধরণের বিপ্লব ঘটিয়েছে। 

আরও পড়ুন ঃ

Post a Comment

Previous Post Next Post