খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্য -
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমন মানবসভ্যতার বদল ঘটেছে, তেমনই বদল ঘটেছে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের। নিন্মে খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করা হল -
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঃ মানবসভ্যতার সূচনালগ্নে মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক, কিন্তু মানবসভ্যতা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে আগুণের আবিষ্কার হয় এবং মানুষ কাঁচা মাংসের পরিবর্তে পোড়ানো মাংস খেতে শুরু করে। ফলে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে।
বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাব ঃ বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে কোন অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাস বদল হতে পারে। যেমন ঔপনিবেশিক ভারতে আগত বিদেশিদের খাদ্যাভ্যাস ভারতীয়রা আপন করে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় পর্তুগিজদের হাত ধরে এদেশে আলু খাওয়া শুরু হয়, মুঘল আমলে বিভন্ন মোগলাই খাবার এদেশে প্রচলন হয়।
ধর্মের প্রভাব ঃ হরপ্পা সভ্যতার সময়কালে, বৈদিক যুগে মানুষ যব, গম, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলেও গুপ্ত, মৌর্য, পাল ও সেন যুগে বৌদ্ধ ধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাবে মানুষ মাছ, মাংস, পেয়াজ, রসুন প্রভৃতি ত্যাগ করে নিরামিষাশী শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাই ধর্মের প্রভাব খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
আর্থিক অবস্থার পরিচায়ক ঃ অর্থের ওপর মানুষের খাদ্যের ধরণ নির্ভর করে। তাই খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চা মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিচয় বহন করে। সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষেরা সবকিছুই ভালো খেতে চায়, আবার দরিদ্র মানুষেরা সামান্য পরিমাণ খেতে পেলেই খুশি। কারণ সমাজের ধনী-দরিদ্রদের মধ্যে অর্থের বিভিন্নতা রয়েছে।
ভৌগলিক পরিবেশ ঃ ভৌগলিক পরিবেশের কারণে মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে। কোন অঞ্চলের জলবায়ু, আওহাওয়া এবং উৎপন্ন ফসলের ওপর সেই অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাস নির্ভর করে। তাই কোন অঞ্চলের পরিবেশ বদলে গেলে সেই অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ঘটে।
মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, ধর্মের প্রভাব, সংস্কৃতির প্রভাব, আর্থিক অবস্থা সবকিছুই খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস চর্চাকে প্রভাবিত করে। কোন অঞ্চলের খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে সেই অঞ্চলের মানুষের ধর্ম, সমাজজীবন, অর্থনৈতিক অবস্থা, কৃষ্টি-কালচার ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়।
আরও পড়ুন ঃ