প্রশ্ন ঃ আধুনিক ইতিহাস চর্চায় শিল্প চর্চার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করো / শিল্প চর্চার ইতিহাস কি ধরণের ইতিহাস / আধুনিক শিল্প চর্চার ইতিহাসে সংগীত, নাটক, নৃত্য ও চলচ্চিত্র সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর ঃ
শিল্প চর্চার ইতিহাস -
শিল্প চর্চার ইতিহাস হল আধুনিক ইতিহাস চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শিল্প চর্চার ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত হল সংগীত, নাটক, নৃত্য, চলচ্চিত্র প্রভৃতি। নিন্মে এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল -
সংগীত ঃ প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে সংগীতচর্চা চলছে। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে সুলতানি যুগ, মুঘল যুগে সংগীতের প্রচলন ছিল। তবে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে জাতীয়তাবোধের বিকাশে সংগীত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বন্দেমাতরম গান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলার মাটি বাংলার জল, রজনীকান্ত সেনের মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়, কাজী নজরুলের কারার ঐ লৌহ কপাটি, অতুলপ্রসাদের বল বল বল সবে প্রভৃতি গানগুলি ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের স্বদেশী আন্দোলনের যুগে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। গানের পাশাপাশি সংগীত চর্চার উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ হল - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সংগীত চিন্তা, করুণাময় গোস্বামীর লেখা বাংলা গানের বিবর্তন, দিলীপকুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা বাংলার রাগ সংগীত চর্চা প্রভৃতি।
নৃত্য ঃ প্রাচীনকাল থেকেই সংগীত চর্চার পাশাপাশি ভারতে নৃত্যচর্চা হয়ে এসেছে। ভারতীয় সমাজের বিবর্তনকে বুঝতে প্রাচীন যুগে ভারতীয়দের মন্দিরের বিগ্রহের সামনে অনুষ্ঠিত দেবদাসী নৃত্য থেকে শুরু করে বর্তমানে চলচ্চিত্রের নৃত্য বিশেষভাবে সহায়ক। নৃত্যচর্চা সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থে ঔপনিবেশিক আমলে এবং স্বাধীনতার পরবর্তীকালে নৃত্যশিল্পের পরিবর্তন, নৃত্যশিল্পের প্রতি সমাজের মনোভাব প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
নাটক ঃ খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম হিসাবে নাট্যশালা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। প্রাচীন বিশ্বের নাটক সম্পর্কিত শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ছিল ভরত মুনি রচিত নাট্যশাস্ত্র। কালিদাস, ভবভুতি রচিত নাটকগুলি সেযুগে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিল। ব্রিটিশ শাসনকালে যেসব নাটকের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটেছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দীনবন্ধু মিত্রের 'নীলদর্পণ নাটক'।
চলচ্চিত্র ঃ ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে প্রথম চলচিত্র প্রদর্শন শুরু হয়। এর ঠিক দুই বছরের মধ্যেই ভারতে চলচিত্র প্রদর্শন শুরু হয়। রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি-র প্রতিষ্ঠাতা হীরালাল সেন প্রথম দিকে বাংলা সিনেমা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। তবে সত্যজিৎ রায়ের দক্ষতায় বাংলা সিনেমা উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়। স্বাধীনতার পড়ে ঋত্বিক ঘতক, মৃণাল সেন, শ্যাম বেনেগাল প্রমুখের পরিচালিত সিনেমায় বলিষ্ঠ রাজনৈতিক সচেতনতার প্রকাশ ঘটেছে।
মূল্যায়ন ঃ সমাজের পরিবর্তনের ধারাগুলি আমাদের কাছে নাচ, গান, নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি তুলে ধরে। নাটক ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমরা জিবন্ত ঘটনার প্রতিরুপ দেখতে পাই। তাছাড়া সমাজকে বিভিন্ন ভাবে সচেতন করার জন্য নাটক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলা যায় আধুনিক ইতিহাসে শিল্প চর্চার ইতিহাস বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন ঃ