ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো

ওয়াহাবি আন্দোলন -

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে একটি অন্যতম আন্দোলন ছিল ওয়াহাবি আন্দোলন। ভারতে এই আন্দোলনের বিস্তার ঘটেছিল পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, বাংলা ও মাদ্রাজ অঞ্চলে। নিম্নে ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো -


উৎপত্তি ঃ ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্ভব হয় আরব দেশে। আব্দুল ওয়াহাব ছিলেন এই আন্দোলনের প্রবর্তক। তাঁর নাম অনুসারেই এই আন্দোলনের নাম হয় ওয়াহাবি আন্দোলন।

ওয়াহাবি কথার অর্থ ঃ ওয়াহাবি কথার অর্থ হলো 'নবজাগরণ'।

আন্দোলনের লক্ষ্য ঃ এই আন্দোলনের লক্ষ্য গুলি ছিল -

     (i) ইসলাম ধর্মের সংস্কার করে তার পুনরুজ্জীবন ঘটানো।

     (ii) 'দার-উল-হারব' বা বিধর্মীর দেশ ভারতকে দার-উল-ইসলাম বা ধর্মরাজ্যে পরিণত করা।

ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন (১৮২০ থেকে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দ) ঃ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন দিল্লির বিখ্যাত মুসলিম সন্ত শাহ ওয়ালি উল্লাহ (১৭০৩-৮৭ খ্রিস্টাব্দ) এবং তাঁর পুত্র আজিজ। অবশ্য ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়বেরিলির সৈয়দ আহমদ। তিনি আজিজের সংস্পর্শে এসে ইসলাম ধর্মের মধ্যে 'শুদ্ধিকরণ' আন্দোলন শুরু করেন। তিনি তাঁর গুরু আজিজের মত ঘোষণা করেন যে, ইংরেজ শাসিত ভারত হল দার-উল-হারব, সুতরাং ইংরেজদের উচ্ছেদ করে একে দার-উল-ইসলাম বা ধর্মরাজ্যে পরিণত করতে হবে। তিনি ইংরেজবিরোধী আদর্শ প্রচার করলেও পাঞ্জাবের শিখদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দ আহমেদ বালাকোটের যুদ্ধে শের সিংহের হাতে পরাজিত ও নিহত হন।


আন্দোলনের অবসান ঃ সৈয়দ আহমদের মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য শিষ্য এনায়েত আলি ও বিলায়েত আলি ওয়াহাবি আদর্শ প্রচার করেন। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির ফলে এই ওয়াহাবি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।

মূল্যায়ন ঃ সবশেষে বলা যায় যে, ধর্মীয় চেতনা প্রসূত এই আন্দোলন পরবর্তী ক্ষেত্রে জমিদার ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তবে এই আন্দোলনের তাৎপর্য ছিল অপরিসীম।

Post a Comment

Previous Post Next Post