সিন্ধু সভ্যতার উদ্ভব ও বিস্তৃতি -
পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ছিল সিন্ধু সভ্যতা। তাম্র-প্রস্তর যুগের এই সভ্যতা ছিল একটি উন্নত নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা।
উদ্ভব ঃ ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে সিন্ধু সভ্যতার আবিষ্কার ঘটে। এই সভ্যতার মানুষের ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রী, হাতিয়ার, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি প্রভৃতি বিশ্লেষণ করে ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, সিন্ধু সভ্যতা ছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের সভ্যতা। এই সভ্যতার মানুষ লোহার ব্যবহার জানত না। কিন্তু তারা তামা ও ব্রোঞ্জের ব্যবহার জানতো। তাই সিন্ধু সভ্যতাকে তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা বলা হয়। রেডিও কার্বন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাচীনত্ত্ব পরীক্ষা করে অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন যে, সিন্ধু সভ্যতা প্রায় ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সময়কালে বিস্তার লাভ করেছিল।
বিস্তৃতি ঃ সিন্ধু সভ্যতা সিন্ধু নদীর অববাহিকা অঞ্চলে গড়ে উঠলেও এই সভ্যতার আয়তন ছিল প্রায় ১২.৫ লক্ষ বর্গ কিমি। শুধু সিন্ধু নদীই নয়, ঘর্ঘরা, শতদ্রু, ভোগাবো, ইরাবতী প্রভৃতি নদীর উপত্যকায় সিন্ধু সভ্যতার বিস্তার ঘটেছিল। প্রায় ১৫০০ ছোট-বড় নগর বা শহরকে কেন্দ্র করে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো ছিল সিন্ধু সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র। এই সভ্যতার বিস্তার ছিল উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১৬০০ কিমি এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ১১০০ কিমি।
সিন্ধু সভ্যতার সীমানা ঃ সিন্ধু সভ্যতা উত্তরে জম্মুর মান্ডা অঞ্চল থেকে দক্ষিনে গোদাবরী নদীর তীর পর্যন্ত এবং পূর্বে উত্তরপ্রদেশের আলমগিরপুর থেকে পশ্চিমে বেলুচিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। পাঞ্জাব, গুজরাট, রাজপুতানা, সৌরাষ্ট্র প্রভৃতি অঞ্চলে সিন্ধু সভ্যতার চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে গাঙ্গেয় উপত্যকায় সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়নি।
প্রধান কেন্দ্রসমূহ ঃ সিন্ধু সভ্যতার প্রধান কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ইরাবতী নদীর তীরে অবস্থিত হরপ্পা। সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত মহেঞ্জোদারো, ঘর্ঘরা নদীর তীরে অবস্থিত কালিবঙ্গান, গুজরাটের ভোগাবো নদীর তীরে অবস্থিত লোথাল, পাঞ্জাবের শতদ্রু নদীর তীরে অবস্থিত রোপার প্রভৃতি। এছাড়া সিন্ধু সভ্যতার উল্লেখযোগ্য শহরগুলির নাম হলো চানহুদারো, কোটদিজি, আলমগিরপুর, মিটাথল, রোজদি প্রভৃতি।
আরও পড়ুন ঃ