চুয়াড় বিদ্রোহের ব্যাপকতা লেখ। ব্রিটিশ সরকার কিভাবে চুয়াড় বিদ্রোহ দমন করেছিল -
চুয়াড় বা চোয়াড় বলতে বোঝায় - দুর্বৃত্ত ও নীচ জাতি। চুয়াড়দের বসবাসের স্থান ছিল বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এবং মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম অংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
চুয়াড় বিদ্রোহের ব্যাপকতা ঃ প্রথমদিকে চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল আঞ্চলিক ও স্বল্প স্থায়ী। কিন্তু ১৭৯৮ ও ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ অনুষ্ঠিত চুয়াড় বিদ্রোহে বিদ্রোহীদের সঙ্গে জমিদারদের পাইকরাও জোটবদ্ধ হয়েছিল। তারা সমবেতভাবে মেদিনীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করে। বিদ্রোহীরা একে একে কাশিজোড়, বাসুদেবপুর, তমলুক, দুবাগড়, জলেশ্বর, শালবনি, বলরামপুর, রামগড় প্রভৃতি পরগনার উপর আক্রমণ ও লুণ্ঠন চালায়। বলা যায়, ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে সমগ্র মেদিনীপুর জেলার এমন কোন স্থান ছিল না, যা বিদ্রোহীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন অংশ জনশূন্য হয়ে পড়ে। এই পর্বে রায়গড়, শতপতি, বীরভূম, শালবনি প্রভৃতি পরগনায় বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর খন্ড যুদ্ধ শুরু হয়। ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পুরাবিত্রা ও আনন্দিনী নামক দুটি তালুকের এবং ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাস নাগাদ তমলুকের বাসুদেবপুর অঞ্চলের চাষিরা খাজনা বন্ধ করে বিদ্রোহীদের দলে যোগদান করে।
ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক চুয়াড় বিদ্রোহ প্রতিরোধ বা দমন ঃ ব্রিটিশ সরকার চুয়াড় বিদ্রোহ দমনের জন্য বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করে। তারা বিভেদনীতি প্রয়োগ করে চোয়াড় সর্দার ও পাইকদের পুলিশের কাজে নিযুক্ত করে বিদ্রোহীদের নিস্তেজ করে দেয়। অতঃপর বিদ্রোহী চুয়াড়দের চুয়াড় সর্দারদের অধীনে রাখা হয়। এক একজন সর্দারের অধীনে ২০০ থেকে ৪০০ জন চুয়াড়বাসীকে রাখা হয়। এইভাবে সরকার দমননীতি ও কূটনীতি এবং অর্থের দ্বারা চুয়াড় বিদ্রোহ দমন করে।
আরও পড়ুন ঃ